প্রতিটি বাবা মা তাঁর সন্তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে জন্মের প্রথম দিন থেকে। পৃথিবীর সব বাবা মা চায় তাঁর সন্তান অনেক বড় হোক । সন্তানকে বড় করতে আমরা অর্থের পিছনে আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময় ব্যয় করছি কিন্তু সন্তানের জন্য আমরা অর্থ ছাড়া কিছু রেখে যাচ্ছি না । আমরা স্বপ্ন দেখি সন্তান আমাদের বৃদ্ধ বয়সে আমাদের পাশে থাকবে আমাদের দেখবে কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন এবং নির্মম । সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা বইটিতে লেখক আমাদের হৃদয়ের না বলা অনেক কথা তুলে ধরেছেন ।
বইয়ের নামঃ সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা
মূল লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেগ
অনুবাদঃ ১. জিম তানভীর
২. মোদাসসের বিল্লাহ তিশাদ
৩.সানজিদা শারমিন
সম্পাদনাঃ আবু তাসমিয়া আহমেদ রফিক
শার”ই সম্পাদনাঃ ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
প্রকাশকঃ সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড
প্রথম প্রকাশঃ যুল-কাদ ১৪৩৮, আগস্ট ২০১৭
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
প্রতিটি বাবা মা তাঁর সন্তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে জন্মের প্রথম দিন থেকে। পৃথিবীর সব বাবা মা চায় তাঁর সন্তান অনেক বড় হোক । সন্তানকে বড় করতে আমরা অর্থের পিছনে আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময় ব্যয় করছি কিন্তু সন্তানের জন্য আমরা অর্থ ছাড়া কিছু রেখে যাচ্ছি না । আমরা স্বপ্ন দেখি সন্তান আমাদের বৃদ্ধ বয়সে আমাদের পাশে থাকবে আমাদের দেখবে কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন এবং নির্মম । সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা বইটিতে লেখক আমাদের হৃদয়ের না বলা কথাগুলো তুলে ধরেছেন ।
আমাদের সন্তান আমাদের কর্মের ফল । সন্তানকে যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা না হয় তাহলে সে ভুল পথে পা দিবে । তাঁকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে বাবা ও মা ।
লেখক বইটিতে সন্তান পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরেছেন। যারা পরিচর্যা বলতে শুধু খাওয়ানো, ঘুমানো , পরিচ্ছন্নতা বুঝে থাকেন তাঁদেরকে বইটি হতাশ করবে কারণ এখানে মূলত আত্নীক পরিচর্যার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা বইটির ভূমিকা পড়লে বইটি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে ।
আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু ধারণা, প্রথা ও চিন্তা চেতনার কথা বলা হয়েছে যা লেখক তাঁর লেখার মাধ্যেম বুঝাতে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে এগুলো ভুল । যেমন- আমরা প্রায়ই আমরা একথা বলে থাকি-
“আমি চাইনা আমার সন্তান জীবনে কখনো আমার মতো কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হোক “
অর্থাৎ আমরা সন্তানকে আমার মধ্যে যে যোগ্যতা আছে সেগুলো অর্জন করতে দিতে চাইনা । আমাদের উপার্জিত অর্থ সে শুধু ব্যয় করবে তাঁর যোগ্যতায় উপার্জন করতে শিখবে না । তাই লেখক বলেন-
“কেবল পূরবসূরিদের কাঁধে ভর দিয়ে জীবন পার করে দেওয়ার কোনো সার্থকতা নেই । প্রত্যেক প্রজন্মেরই রচনা করা চাই নিজস্ব এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ।“
সন্তানকে ছোট বেলা থেকে মানুষকে বস্তুগত দৃষ্টিতে মাপতে শিখাতে শুরু করি । আর তাই যদি করো নিকট দামি খেলনা থাকলে সে নিজেকে ধনী মনে করে। সে উত্তম শিশু । সন্তানকে শিখানো উচিত ধনী গরীব সম্পদের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে চিন্তা চেতনার উপর ।
বর্তমান সমাজে আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । প্রবৃত্তির পূজা এবং ভোগবিলাসে মত্ত । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী হলেও সন্তানের বাবা মা অথবা অভিভাবকরা বহুলাংশে দায়ী । পরিবার থেকে সন্তান প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে আজ । বিদ্বান ব্যক্তিরা আজ সম্মানের পাত্র নয়, ধনীরা আজ সম্মানের পাত্র । সে কারণে আমরা সবাই ধনী হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ।
লেখক তার “সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা” বইয়ে ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অংশ পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন । বাবা মার সাথে ছোটবেলায় কাটানো কিছু স্মৃতি মলাট বন্দী করেছেন । সন্তানের পরিচর্যা বলতে লেখক বার বার আত্মিক উন্নয়নের কথা বলেছেন । সন্তানকে ক্ষুদ্র জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট না করে আমরা সহমর্মিতা , অন্যদের সাথে জিনিস ভাগাভাগি চলা শিক্ষা দিতে পারি । আজ যারা ছোট আগামী দিন তাঁরা বড় হয়ে বাবা মা হবে তাঁরা যদি নিজেরা কিছু শিখতে না পারে তাহলে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারবে না ।
সন্তানরা তাদের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ভাইয়েরা বোনদের সবচেয়ে কম মূল্যের সম্পত্তি বা নাম মাত্র মূল্য দিয়ে বোনদের বিদায় করে যা অন্যয় । এর বিপরীত চিত্র আমাদের সমাজে দেখা যায় না চলে । তাই লেখক বলেন –
আমি এমন অনেক পরিবারের কথা জানি যেখানে সন্তানরা সম্পত্তির জন্য বাবা মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমি এমন অনেক পরিবারের কথা জানি ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এবং বোন বোনের বিরুদ্ধে মামলা করে করে আইনজীবীদের ভুঁড়ি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে ।
আবার আমি এমন পরিবারের কথাও জানি যেখানে ভাইয়েরা স্বেচ্ছায় তাদের বোনের জন্য সম্পত্তির অংশ ছেড়ে দিয়েছে । তারা বলে আমাদের যথেষ্ট আছে । আমরা আল্লাহর পুরস্কার চাই ।
নিজের ঈমান ও আখিরাতের কথা চিন্তা করে সন্তানকে আত্মিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে । মানুষ মারা যাওয়ার পর আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায় শুধু মাত্র তিনটি ব্যতীত ।
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত , রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- মানুষ মৃত্যুবরন করলে তাঁর যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায় কেবল তিনটি বাকি থাকে
১.সাদাকায়ে জারিয়া বা অবিরত দান,
২. উপকারী জ্ঞান, এবং
৩.এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে ।
সহীহ মুসলিম ৪০৭৭ (ই.ফা)
বাবা মার কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা না হলে সন্তানরা পথ ভ্রষ্ট হতে পারে তার একটি চিত্র লেখক” সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা “ বইয়ে তুলে ধরেছেন –
আরো পড়ুন >> ম্যাসেজ-মিজানুর রহমান আজহারী Massage Mizanur Rahman Azhari
বাবা মায়ের অভ্যাস
১. জাংক ফুড ও টেলিভিশনে অভ্যস্ত ।
২. নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ আদায়ে অভ্যস্ত ।
৩. শপিং করায় অভ্যস্ত ।
সন্তানরা যেমন হবে
১. নাদুশ-নুদুশ বাচ্চা পাওয়া যাবে যার অর্জন খুবই কম এবং হার্টে রোগে আক্রান্ত হবে ।
২. অসুস্থ বা বৃদ্ধ বয়সে বাবা মার পাশে থেকে সেবা যত্ন করবে ।
৩. উত্তম চারিত্রিক মাধুর্যের পরিবর্তে ফোন সেট ও শার্টের ব্যান্ড দিয়ে নিজেকে মূল্যায়ন করবে ।
সন্তানকে শুধু থাকা ,খাওয়া প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে বসে থাকলে চলবে না , তাকে সুশিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ।
সন্তানকে ছোট সময় থেকে ইসলামের মৌলিক বিষয় শিক্ষা দিতে হবে । ঈমান, ইসলাম, তাওহীদ, রিসালাত , কুরআন হাদীস শিক্ষা দিয়ে বড় করতে হবে । চিন্তা চেতনা সব কিছু হবে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত কর্ম পদ্ধতি অনুসারে । আমাদের সামনে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তি আমাদের শেষ নবী । আল্লাহ্ আমাদের একমাত্র উপাস্য । আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া তার কাছে করতে হবে । আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায় করতে হবে ।
তাওহীদের একটি অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহ্ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । বিস্তারিত পড়ার জন্য বাজার থেকে তাওহীদের বই সংগ্রহ করতে হবে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী পড়তে হবে । ছোটদের জন্য নবী জীবনী ক্রয় করেত হবে ।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী শুধু জীবনী নয় একজন আদর্শ মহামানবের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি কথা, কাজ, আদর্শ লিপিবদ্ধ করা মহাসমুদ্র । বর্তমান আধুনিক যুগে আজ পর্যন্ত কারো জীবনী এতো নিখুঁত বিস্তারিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি । নবীজির কয়টি চুল প্যাকেছিল ,সেগুলোর অবস্থান কোথায় ? বিস্তারিত তথ্য তার জীবনী পাঠ করলে জানা যায় যা সারাবিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল । তার পরে কোন নবী রাসূল পৃথিবীতে আসবে না । আল্লাহ্ বলেন-
মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহ্র রাসূল এবং শেষ নবী । আল্লাহ্ সব বিষয়ে জ্ঞাত ।
সূরা আল আহযাব ৩৩:৪০
সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সমান ভালবাসা দিতে হবে ।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট দু’আ করার শিক্ষা দিতে হবে সন্তানকে । দু’আ একটি ইবাদাত । সন্তানের পরিচর্যা নিতে হলে দান করার অভ্যাস করতে হবে , সন্তান বাবা মাকে দেখে শিখতে পারে । সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা বইটি ইসলাম প্রচার অর্থাৎ দাওয়াত অধ্যায় দিয়ে ইতি টানছেন ।
সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা বইটির কয়েকটি উক্তি
১. চামচে তুলে খাইয়ে দিলে, চামচের আকার-আকৃতি ছাড়া আর কিছুই শেখা হয় না । -ই.এম. ফরেস্ট
২. একজন মানুষ ধনী না গরিব সেটা তার সম্পদের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না । বরং নির্ভর করে তার চিন্তা – চেতনার ওপর ।
৩. সন্তানকে সাহায্য করুন; কিন্তু তার হয়ে কাজগুলো করে দেবেন না । পরামর্শ দিন; তার উপর সবকিছু চাপিয়ে দেবেন না ।
৪. কাজ শেষে ঘরে ফেরার সাথে সাথে আপনার ছোট্ট সন্তানটি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আপনার দামী স্যুটে হয়তো ময়লা হাতের ছাপ দিবে । কিন্তু আপনার স্যুটের চেয়ে সে আলিঙ্গনের মূল্য অনেক বেশি ।
৫. বাড়ির বাইরের চাকচিক্য সেখানকার বাসিন্দাদের সুখ-শান্তির পরিচায়ক নয় । নিয়ম-নীতি , সূখ আর পরিতৃপ্তিই পারে ইট-কাঠের একটা বাড়িকে শান্তির নীড়ে পরিণত করতে ।
মির্জা ইয়াওয়ার বেগ এর “সন্তানঃ স্বপ্নের পরিচর্যা” বইটি “প্যারেন্টিং” বিষয়ে ভালো একটি বই যা বাবা মায়ের সন্তানকে ভালো মানুষ এবং প্রকৃত মুসলিম হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে ।