সময়ের পরিভ্রমণে দিনের পর মাস, মাসের পর বছর । বার মাসে একটি বছর যে ভাবে পূর্ণ হয় ম্যাসেজ বইটিও ১২ টি অধ্যায় দিয়ে সাজানো হয়েছে । প্রতিটি অধ্যায়ের বিষয় বস্তু একটি অপরটি থেকে আলাদা । বইটির লেখক-মিজানুর রহমান আজহারী (mizanur rahman azhari) সহজ সরল ভাষায় খুব সুন্দরভাবে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন । তার লেখা বাংলায় প্রথম বই কিন্তু বইটি পড়ে কখনো প্রথম বই মনে হবে না । “ম্যাসেজ” বইটি সব শ্রেণীর পাঠকের মনে জায়গা করে নিবে আশা করা যায় ।
মিজানুর রহমান আজহারীর(mizanur rahman azhari) বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যঃ
বইঃ ম্যাসেজ লেখকঃ মিজানুর রহমান আজহারী (mizanur rahman azhari) প্রকাশনীঃ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স প্রচ্ছদঃ সাইমুম আহমেদ হাসিব প্রথম প্রকাশঃ ৮ এপ্রিল, ২০২১ ফিক্সড প্রাইজঃ ২৭৫ টাকা পৃষ্ঠাঃ ২৯৬ কভারঃ হার্ড কভার
আরো পড়ুন>> ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ভাষণ-
মিজানুর রহমান আজহারী একজন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক । যার খ্যাতি সারাদেশব্যপি । বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজ তার আলোচনা শুনে ইসলাম জানার আগ্রহী হচ্ছে । লেখক আধুনিক মননের একজন মানুষ যিনি মিশরের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় আল আজহার ইউনিভার্সিটির “তাফসির অ্যান্ড কুরআনিক সাইন্স ডিপার্টমেন্ট “ বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন । বর্তমানে মালয়েশিয়াতে পিএইচডি করছেন ।
বইটি পড়লে উস্তাদ নোমান আলী খানের লেখার কথা মনে পড়ে যাবে । উস্তাদ নোমান আলী খান যেমন সাধারণ বিষয় অসাধারণভাবে তাঁর লেখাতে তুলে ধরেন ম্যাসেজ বইটিতেও তাঁর প্রতিফলন ঘটেছে । লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন তাঁর বইয়ে ঐতিহাসিক ও এক্সক্লুসিভ কোনো তথ্য নেই ।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করে থাকি সেগুলো আরো সুন্দর ও সঠিকভাবে কত সহজে করা যায় তাঁর দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে এই বইয়ে । বইয়ে প্রচুর রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে কুরআন, হাদীস ,সীরাত ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে ।প্রতিটি অধ্যায়ে কুরআনের আয়াত নম্বর , হাদীস গ্রন্থের নাম ও হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে যার ফলে উৎসুক যাচাই করতে পারবেন ।
লেখক বইটি শুরু করেছেন কুরআনের প্রথম সূরা ,সূরা ফাতিহা দিয়ে । এ সূরা কুরআনে নাযিল হওয়া প্রথম পুরনাঙ্গ সূরা । মুসলমানদের জন্য এ সূরা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে একজন মুসলমান এ সূরা পড়ে থাকেন । অর্থটা জানা থাকলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং ইবাদতের স্বাদ পাওয়া যাবে । লেখক সূরা ফাতিহার বিভিন্ন নাম আলোচনা করেছেন । এরপর সূরা ফাতিহার সর্ব মোট ৭ টি আয়াত আলাদা আলাদাভাবে অর্থ ও ব্যাখ্যা সহজ ভাবে উপস্থাপন করেছেন ।
বইটি প্রতিটি মানুষের আত্ন-উন্নয়নে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে সহজে অনুমেয় । ইসলামে আত্ন উন্নয়নের বই কম থাকলেও দিন দিন তার সংখ্যা বাড়ছে । তরুণ লেখকরা এগিয়ে আসছে । আজ তরুণ সমাজকে সঠিক পথে আনতে “ম্যাসেজ “অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ।
সন্তানকে কিভাবে বড় করবেন ? স্মার্ট প্যারেন্টিং এর মাধ্যমে সন্তানকে সুন্দরভাবে মানুষ করা যাবে । স্মার্ট প্যারেন্টিং অধ্যায়টি সংক্ষিপ্ত হলেও আমরা যদি বিষয়গুলো বুঝে মানতে পারি তাহলে লেখা সার্থক হবে । আজ সমাজে যতো অশান্তি তার বেশীর ভাগ আমাদের সন্তানদের নিয়ে । সন্তান সুন্দরভাবে মানুষ হচ্ছে না , খারাপ হয়ে যাচ্ছে । বাবা মার সাথে সম্পর্ক ভালো না, বাবা মার কথা শুনে না । বিভিন্ন নেশায় তারা আসক্তি হয়ে যাচ্ছে ।
সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব বাবা মার কিন্তু সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার কারণে তাঁরা ভিন্ন পথে চলে যায় । যারা এ বিষয়ের উপর আরো পড়তে চান তারা আমির জামান ও নাজমা জামান এর “ প্যারেন্টিং” বইটি পড়তে পারেন । প্যারেন্টিং বইটি সব বাবা মার পড়া উচিত যদি এ বিষয়ের উপর কোনো বই পড়া না থাকে ।
মুনাফিকদের নিয়ে কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে এবং একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল হয়েছে মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে । সমাজে দুধরণের মুনাফিক বসবাস করে – একশ্রেণী বিশ্বাসগত অপর শ্রেণী কর্মগত । লেখক মুনাফিকদের “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” নাম দিয়ে একটি ম্যাসেজ নিয়ে আসছেন যা সংক্ষিপ্ত । এ অধ্যায়ে শুধু মুনাফিকের বৈশিষ্ট কুরআন ও হাদীসের আলোকে উল্লেখ্য করা হয়েছে । আমার মনে হয়েছে এ অধ্যায়ে- মুনাফিকি থেকে বাঁচার উপায় ও মুনাফিকের সাথে মুমিনের সাথে সম্পর্ক এ ২ টি অনুচ্ছেদ নিয়ে আসতে পারলে “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” ম্যাসেজটা পরিপূর্ণ হতো ।
লেখক কুরানিক শিষ্টাচার নামে একটি অধ্যায়ে বলেন-
একটি সমাজ সুস্থ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলরূপে পরিচালিত হওয়ার জন্য উত্তম শিষ্টাচার চর্চার কোনো বিকল্প নেই । প্রচলিত আছে-“ একটি মানুষ দুই বছরে কথা বলতে শেখে, আর পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা শিখতে লাগে সারা জীবন । “
ম্যাসেজ,পৃষ্ঠা-৪৯
আল্লাহ্ তায়ালা মানুষদেরকে সামাজিক নিয়মকানুন ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি সূরা নাযিল করেন ।
সুরাটির নামঃ হুজরাত
আয়াত সংখ্যাঃ ১৮
মাদানী সূরা, ইহা কুরআনের ৪৯ তম সূরা।
এই সূরাতে আমাদের চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে । তাই এই সূরার অপর নাম “সুরাতুল আখলাক” বা চরিত্র গঠনের সূরা । সূরাটিকে বিষয়ের উপর নির্ভর করে তিনটি অংশে ভাগ করে আলোচনা করেছেন । এই অধ্যায়টি সবাইকে মুগ্ধ করবে ।
ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন । আমরা সাধারণ মানুষেরা দ্বীন বলতে শুধু ধর্মকে বুঝে থাকি কিন্তু লেখক স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন –
মানুষ যে পদ্ধতিতে নিজের জীবন পরিচালনা করা তাকে “দ্বীন” বলে। এই দ্বীন কী হবে, অর্থাৎ মানুষ কোন পদ্ধতিতে জীবন পরিচালনা করবে- তা আল্লাহ্ নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন ।
যে সব কারণে ইসলামকে একমাত্র ও শ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা বলা হয় সেগুলোর দশটি পয়েন্ট লেখক কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করেছেন । বইটি এই অধ্যায়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়েছে ।
ম্যাসেজ বইটি সুন্দর একটি অধ্যায় দিয়ে পরিসমাপ্তি করেছেন। এটাই লেখকের সার্থকতা । কথায় আছে “শেষ ভালো যার সব ভালো তার” । বিদায় বেলা অধ্যায়ে লেখক আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগেই প্রস্তুতির কথা মনে করে দিয়েছেন । মৃত্যু চলে আসলে আমাদের সময় শেষ হয়ে যাবে । ভালো কাজ করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না, ভুল শোধরানো কোনো অবকাশ পাওয়া যাবে না । সময় থাকতে আমাদের জীবন আয়ু কাজে লাগাতে হবে । লেখকের ভাষায়-
কিন্তু বড়োই আফসোসের বিষয়, এই বাস্তবতার কথা জেনেও মৃত্যুর ব্যাপারে আমরা যারপরনাই উদাসীন! যে দুনিয়ার ভিসার মেয়াদ অনিশ্চিত, সেই দুনিয়াকে আপন করতে আমরা ব্যস্ত !
ভালো মৃত্যুর কিছু আলামত এবং খারাপ মৃত্যুর কিছু আলামত বর্ণনা করা হয়েছে । খুব সুন্দর একটি গল্প দিয়ে অধ্যায়টির সাথে বইটিও শেষ করেছেন। সবাইকে গল্পটি পড়ার পরামর্শ দেওয়া হলো ।
বইটি প্রায় সব দোকানে পাওয়া যায়। দাম ফিক্সড হওয়ার কারণে ক্রেতাকে মূল্য নিয়ে ভাবতে হবে না । বইটি আপনারা অনলাইন থেকে কিনতে পারেন –
Pingback: ইসলামে নারীর অধিকার » islamic world
Pingback: ঈমানের আরকান | islamic world
Pingback: ঈমান ভঙ্গের কারণ ১০ টি
Pingback: ঈমানের তৃতীয় আরকানঃ সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস - islamic world
ধন্যবাদ, খুব ভালো একটি পোস্ট I