প্রতিটি মুসলিম নর নারীর ঈমান আনয়নের পরে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত পাঁচওয়াক্ত সালাত যথা সময়ে আদায় করা । হাশরের মাঠে বান্দার প্রথম হিসাব নেওয়া হবে সালাতের । পুরুষদের জামাতের সাথে সালাত আদায় করার নিয়ম । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নবুয়ত জীবনে ফরয সালাতের এতো গুরুত্ব দিয়েছেন, জামাত বিহীন ফরয সালাত আদায় করেনি ।
এ পোস্টে যা আছে-
- জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব
- জামাতে সালাত আদায়ের ফযিলত
- বিশেষ বিশেষ কারণে জামাতে অনুপস্থিত হওয়ার অনুমতি রয়েছে
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব
ইসলামের সকল আহকাম ফেরেশতা জিবরাঈল(আঃ) এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসছে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মেরাজের রাতে আল্লাহ্ তা’লা সরাসরি আমাদের প্রিয় নবীকে দিয়েছেন তাঁর উম্মতের জন্য । যার কারণে সালাত আদায়র করলে ফযিলত যেমন অনেক বেশী তেমনি আদায় না করলে শাস্তি ভয়াবহ ।জামাতে সালাত আদায়ের গুরুত্বের কথা কুরআনে ও হাদীসে বলা হয়েছে । যা আমরা নিম্নের আলোচনা থেকে জানতে পারি –
ক) কুরআনের আলোকে
জামাতে সালাত আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালা । যেখানে আল্লাহ্ বলছেন জামাতে সালাত আদায় করতে সেখানে আমরা একা একা সালাত আদায় করি। আল্লাহ্ কুরআনে বলেন-
“তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো ।“
(সূরা বাকারা ২:৪৩)
খ) হাদীসের আলোকে
হাদীসের আলোকে জামাতে ফরয সালাতের গুরুত্ব আলোচনা করা হল-
১. সালাত হবে না
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের সাথে সালাত আদায় করার তাগিত দিয়েছেন । জামাতের সাথে সালাত আদায় না করলে সালাত হবে না । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন –
“যে ব্যক্তি নামাযের আহ্বান শুনতে পেল কিন্তু আহ্বানে সাড়া দিয়ে জামাআতে এলো না , তাঁর নামাযই হবে না । তবে যদি ওযর ( ভয় যা অসুস্থতা ) থাকে তাহলে হতে পারে ।“
তিমিযি , আস-সুনান ১/৪২২, ইবনু মাজাহ , আস-সুনান ১/২৬০, সূনান আবু-দাউদ হাঃ ৫৫১( ইসলামিক ফাউন্ডেশন), আলবানী , সহিহুত তারগীব ১/১০২,
হাদীসটি সহীহ
২. বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া
যে সব লোক আযান শুনার পর সালাত আদায় করতে মসজিদে আসেনা তাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিতে চেয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী। কত কঠিন কথা ।মসজিদে আযান হচ্ছে আর আমরা টিভি দেখতে ব্যস্ত । মসজিদে যাওয়ার কথা মনেও করি না ।অনেক সময় সালাতের ওয়াক্ত যখন প্রায় শেষ তখন তাড়াহুড়া করে একা একা সালাত আদায় করি আবার অনেক সময় আদায়ই করি না ।
আবু হুরাইরা (রাঃ)বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দিব এবং সে মতো জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হবে । অতঃপর আমি সালাতের নির্দেশ দেব এবং তদানুসারে আযান দেওয়া হবে । অতঃপর একজনকে নির্দেশ দিব সে মানুষের ইমামতি করে সালাত শুরু করবে । অতঃপর আমি তাদেরকে রেখে সে সকল মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেব, যারা তখনো সালাতের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়নি ।
বুখারী শরীফ হাঃ ৬১৬ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন ),সহীহ মুসলিম হাঃ৬৫১,সুনান নাসারি হাঃ৮৪৮,সুনান আবু দাউদ হাঃ ৫৪,সুনান তিরমিযি ( তাহকিককৃত) হাঃ ২১৭,ইবনু মাজাহ হাঃ ৭৯১
৩. অন্ধের জন্যও জামাত
সুস্থ থাকা অবস্থায় অবহেলা করে সালাত আদায় করি না, যদিও করি বাসাতে একা একা আদায় করি ,জামাতে আদায় করি না। মসজিদে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করি না । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব দিতে গিয়ে আন্ধ ব্যক্তিকে একাকী সালাত আদায়ের অনুমতি দেননি ।
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলেন – হে আল্লাহ্ রাসূল, আমার কোনো পরিচালক নেই যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে নিয়ে আসবে । লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আবেদন করে, যেন তিনি তাঁকে নিজ বাড়িতে সালাত আদায়ের অনুমতি প্রদান করেন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন । যখন সে ফিরে জেতে থাকে তখন তিনি তাঁকে ডাকেন । তিনি বলেন, তুমি – কি সালাতের আহ্বান( আযান) শুনতে পাও? লোকটি বলে হ্যাঁ । তিনি বলেন তাহলে আযানের জবাব দিবে (আযানের ডাকে সাড়া দিয়ে জামাআতে উপস্থিত হবে) আবু দাউদ ও হাকিমের বর্ণনায়ঃ আমি তোমার জন্য জামাআত পরিত্যাগের কোনো অনুমতি পাচ্ছিনা ।
সহীহ মুসলিম , হদীস ১৩৬১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),সুনান আবু দাউদ, হাদীস ৫৫২(ইসলামিক ফাউন্ডেশন), মুস্তাদরাক হাকিম , হাদীস ৯০৩
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের ফযিলত
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের অপরিমেয় সওয়াব ও ফযিলতের কথা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের সাথে সালাত আদায়ের তাগিত বার বারদিয়েছেন ।
১. ২৭ গুন বেশী সওয়াব
জামাতে সালাত আদায় করলে ২৭ গুন বেশী সওয়াব পাওয়া যায় । যা নীচের হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি।
আব্দুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র)… আব্দুল্লাহ ইবনু উমর ( রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- একাকী সালাতের চেয়ে জামাতে সালাতের মর্যাদা ২৭ গুন বেশী ।
বুখারী শরীফ হাঃ ৬১৭(ইসলামিক ফাউন্ডেশন),মুসলিম আস-সহীহ ১/৪৫৫০,সুনান আত-তিরমিজি( তাহকীককৃত) হাঃ ২১৫
২. ২৫ গুন বেশী সওয়াব
আবার কিছু হাদীসে ২৫ গুন বেশী সওয়াবের কথা বলা হয়েছে ।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কোন ব্যক্তির জামাতের নামায তাঁর একাকী নামাযের তুলনায় পচিশ গুন( সওয়াব) বৃদ্ধি পায় ।
বুখারী শরীফ হাঃ ৬১৮(ইসলামিক ফাউন্ডেশন),সুনান আত-তিরমিজি( তাহকীককৃত) হাঃ ২১৬,ইবনু মাজাহ হাঃ ৭৮৬,৭৮৭
৩. জাহান্নাম ও মুনাফিকী থেকে মুক্তি
কেউ যদি চল্লিশ দিন জামাতে তাকবীর উলার সাথে সালাত আদায় করতে পারে তাঁর জন্য দুটি পুরুস্কার – ১. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ২. মুনাফিকী থেকে মুক্তি
উকবা ইবনু মুকারাম ও নাসর ইবনু আলী (রহঃ) …… আনাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেউ যদি আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন তাকবীর উলার সাথে জামাআতে সালাত আদায় করে তবে তাঁকে দুটি মুক্তি সনদ দেয়া হয় একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তির, অপরটি হল মুনাফিকী থেকে মুক্তি ।
সূনান তিরমিজি হাঃ ২৪১ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন ), আল বানী সহীহুত তারগীব ১/১৯৮
হাদীসটি হাসান
৪. সারা রাত ইবাদতের সওয়াব
এশার সালাত ও ফজরের সালাত যদি কেউ জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে সারা রাত ইবাদত করার সওয়াব সে পাবে । জামাতের সাথে সালাত আদায়ের এতো সওয়াব !
আহমদ ইবনু হাম্বল …… উছমান ইবনু আফফান ( রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন যে ব্যক্তি এশার নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধ রাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করল । আর যে ব্যক্তি ফজর ও এশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন সারা রাতব্যপী ইবাদতে মশগুল থাকল ।
সূনান আবু দাউদ হাঃ ৫৫৫ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
হাদীসটি হাসান
বিশেষ বিশেষ কারণে জামাতে অনুপস্থিত হওয়ার অনুমতি রয়েছে
পুরুষদের জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্বের কথা বলা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে ঘরে ফরয সালাত আদায় করা যাবে ।নীচে কয়েকটি দেওয়া হল-
১. প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে ( বুখারী শরীফ ৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২.অন্ধকার রাত ও প্রবল বৃষ্টি (বুখারী শরীফ ৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মহিলাদের মসজিদের যাওয়ার অনুমতি থাকলেও ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম।
আমরা (পুরুষ) নিয়ত করি ফরয সালাত জামাতের সাথে আদায় করার । আল্লাহ্ আমাদের সবার নেক নিয়ত কবুল করুন । অন্যদিকে মহিলাদের যথা সময়ে ঘরে সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন । আমিন ।।
সহায়ক গ্রন্থঃ
১. আল কুরআন
২. সহীহ বুখারী
৩.সহীহ মুসলিম
৪. সূনান তিরমিজি
৫. সূনান আবু দাউদ
৬. ইবনু মাজাহ
৭. খুতবাতুল ইসলাম: জুমআর খুতবা ও সমকালীন প্রসঙ্গ – ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
৮.ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার-১ম খণ্ড- অনুবাদ ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
সহায়ক ওয়েব সাইট
আরো পড়ুন>> জান্নাতের সুসাংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন কারা
https://smjuddin.blogspot.com/2021/06/blog-post.html