ঈমান কাকে বলে

ঈমান কাকে বলে

Print Friendly, PDF & Email

Loading

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে সৃষ্টি করে তাঁর জীবন পরিচালনা করার জন্য আল্লাহ্‌ দ্বীন নির্ধারণ করে দিয়েছেন । যারা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত দ্বীনে জীবন পরিচালনা করবে তাঁরা সফল কারণ আল্লাহ্‌র নিকট মনোনীত দ্বীন একমাত্র ইসলাম । যারা ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছেন তাঁরা বড় সুভাগ্যবান । ঈমান ইসলামে প্রবেশের মূল দ্বার এবং তাই ঈমান ইসলামের মূল ভিত্তি । ঈমান কাকে বলে? এ সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করবো । মুসলিমের জীবনে ঈমানের মূল্য প্রাণের চেয়ে মূল্যবান । 

এ পোস্টে যা আছে –

শরীয়তের পরিভাষায়ঈমান কাকে বলে ?

আরবী “আমান”  শব্দ থেকে ঈমান শব্দটির উৎপত্তি ।

আমান অর্থ- নিরাপত্তা , আস্থা , বিশ্বস্ততা ইত্যাদি

ঈমান অর্থ – নিরাপত্তা প্রদান, আস্থা স্থাপন , বিশ্বাস ইত্যাদি

কুরআনে ঈমান শব্দটি বিশ্বাস অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ।

শরীয়তের পরিভাষায়ঃ ঈমান বলতে মনে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা কার্যে পরিণত করা বুঝায় ।

কুরআন ও হাদীসে ‘বিশ্বাস’ অর্থে ঈমান শব্দটি ব্যবহার করা হলেও আকিদা শব্দটি ধর্ম-বিশ্বাস বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ।  

ঈমান কাকে বলে

আল কুরআনেঈমান কাকে বলে ?     

আল্লাহ্‌ কুরআনে অনেক জায়গায় ঈমানের কথা বর্ণনা করেছেন । মানুষ ঈমান আনার পরেও কফরে লিপ্ত হতে পারে । আমাদেরকে ঈমানের সঠিক জ্ঞান অর্জনের সাথে কুফর সম্পর্কেও জানতে হবে । কুরআনের কয়েকটি আয়াত নীচে দেওয়া হলো যা থেকে ঈমান কাকে বলে আমরা জানতে পারবো ।

সূরা নিসাতে আল্লাহ্‌ বলেন-

হে মুমিনগন, তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর রাসুলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসুলের উপর নাযিল করেছেন । আর যে আল্লাহ্‌, তাঁর ফেরেশতাগন , তাঁর কিতাবসমূহ , তাঁর রাসূলগন এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে , সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে ।

 সূরা নিসা(৪ )ঃ আয়াত ১৩৬

আল্লাহ্‌ কুরআনে ইরশাদ করেন-

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এক আহবায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি যে,  ‘তোমারা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো ‘ । সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। অতএব হে আমাদের  প্রতিপালক ! তুমি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কার্যসমূহ গোপন কর এবং মৃত্যুর পর   আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মিলিত কর ।  

সূরা আলা ইমরান(৩)ঃ আয়াত ১৯৩

অন্যত্র আল্লাহ্‌ ইরশাদ করেন-

বিশ্বাসী( মুমিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় কম্পিত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তাদের প্রতিপালকের উপরেই ভরসা রাখে ।   

সূরা আনফাল(৮)ঃ আয়াত ০২

আরো পড়ুন >>

আল ফাতিহা

সূরা ফাতিহার উচ্চারণ, বাংলা অনুবাদ , গুরুত্ব ও ফজিলত

হাদীসে জিবরীল থেকেঈমান কাকে বলে ?    

হাদীস ০১

 মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ..আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমুক্ষে বসা ছিলেন,এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কি?’

 তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি

 তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন। ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।

ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জাননা। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ

(إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ‏)

“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট।” (৩১ : ৩৪)

এরপর ঐ ব্যাক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন,‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন। আবূ আব্দুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷

 বুখারী শরীফ হা.৪৮ (ইসলামিক ফাইন্ডেশন বাংলাদেশ)   

হাদীসে ০২     

আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া’মার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ( ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া’মার)বলেন, সর্বপ্রথম তাকদীর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মাবাদ আল জুহানী কথা তোলেন । আমি (ইয়াহইয়া ইবনু ইয়া’মার)এবং হুমায়দ ইবনু আব্দুর রহমান আল হিমায়রী হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কা ম’আযযামায় আসলাম । আমরা নিজিদের মধ্যে আলোচনা করতেছিলাম যে, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সম্পর্কে যা বে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। 


সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নব্বীতে আমরা আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর দেখা পাই । আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং একজন বামপাশে বসলাম । আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি । আমি আরয করলাম, হে আবূ আবদুর রহমান! আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর কুনিয়াত ছিল আবূ আবদুর রহমান । আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দ্বীন সম্পর্কে গবেষণা করে । তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর – বলতে কিছু নেই । সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই । আল্লাহ্‌র রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ্‌ তা কবুল করবেন না । 

তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবনু খত্তাব (রাঃ) হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর খিদমতে ছিলাম। এমন সময় একজন  লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সা’দা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে। তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না । আমরা কেউ তাঁকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আর দুই উরুর উপর রাখলেন ।   

তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হল, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবেন যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মহাম্মদ

আল্লাহ্‌র রাসুল, সালাত (নামায/ নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের রোযা পালন করবে এবং বায়াতুল্লাহ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ(হজ্জ) পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন আর তিনিই- সত্যায়িত করছেন।

আগান্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঈমান হল আল্লাহ্‌র প্রতি, তার ফেরেশতার প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগনের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাগদীরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগান্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন ।

তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহসান হলো , এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছে, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন।

আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন । আগন্তুক বললেন , আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকা প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে ।   

উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেন যে, পরে আগান্তুক প্রস্থান করলেন । আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম । তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর ! তুমি জানো , এই প্রশ্নকারী কে ? আমি আরয করলাম, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন । রাসূল বললেনঃ তিনি জিবরীল । তোমাদের তিনি দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন ।  

মুসলিম শরীফ হা.০১ (ইসলামিক ফাইন্ডেশন বাংলাদেশ) 

প্রতিটি মুসলমানের উচিত ঈমান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা । ঈমান কাকে বলে? এ বিষয়ে আমাদের অনেকের সঠিক জ্ঞান নেই । আসুন আমরা নিজেরা জ্ঞান অর্জন করি অপরকে উৎসাহিত করি। আল্লাহ্‌ আমাদের সাবাইকে তাওফিক দান করুন ।      

নফল সালাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সালাত>> তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম, ফযিলত ও গুরুত্ব

5 thoughts on “ঈমান কাকে বলে”

  1. Pingback: ঈমানের আরকান | islamic world

  2. Pingback: ঈমান ভঙ্গের কারণ ১০ টি

  3. Pingback: ঈমানের চতুর্থ আরকানঃ নবী রাসূলগনের প্রতি ঈমান - islamic world

  4. Pingback: ঈমানের শাখা সমূহ-১ম পর্ব - islamic world

  5. Pingback: ঈমানের শাখা সমূহ-২য় পর্ব - islamic world

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *