আসমানী কিতাব

ঈমানের তৃতীয় আরকানঃ সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস

Loading

আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মানুষকে ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথে আনয়নের লক্ষে অনেক নবী রাসূল পৃথিবীতে আসছে । আল্লাহর বাণী সমূহ মানুষের নিকট পৌছে দেওয়া তাদের দায়িত্ব ছিল । নবী রাসূলের উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস করা ঈমানের তৃতীয় আরকান ।

এ পোস্টে যা আছে

আসমানী কিতাব কাকে বলে

যুগে যুগে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির রহমত সরূপ নবী রাসূলদের উপর যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাদেরকে আসমানী কিতাব বলে ।

আসমানী কিতাবের সংখ্যা

কুরআনে আসমানী গ্রন্থের সংখ্যা উল্লেখ নেই । ছিয়াছিত্তা গ্রন্থেও কোন সংখ্যা পাওয়া যায় না । একটি দুর্বল হাদীসে আসমানী গ্রন্থের সংখ্যা ১০৪ টি পাওয়া যায় এর মধ্যে ৪ টি বড় এবং ১০০ টি ছোট ।

সকল আসমানী কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলি সন্দেহতীতভাবে সত্য, আল্লাহর বাণী মানুষের পথ প্রদর্শক ।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন-

( এক সময় ) সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো ( পরে এরা নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে তাদের স্রষ্টাকেই ভুলে গেলো ) ।

                                            সূরা বাকারা, ২:২১৩

                                               

প্রধান আসমানী কিতাব সমূহ

প্রসিদ্ধ ৪ টি আসমানী কিতাবের নাম কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যায়। এ ৪ টি গ্রন্থের ব্যপারে আল্লাহ্‌ কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেন ।

১. তাওরাত

হযরত মুসা (আঃ) আর নিকট যে কিতাব অবতীর্ণ হয় তা হচ্ছে তাওরাত । আল্লাহ্‌ বলেন-

নিঃসন্দেহে আমি ( মুসার কাছে) তাওরাত নাযিল করেছি । 

                                         সূরা আল মায়েদা, ৫:৪৪

২. যাবুর

নবী দাউদ ( আঃ) এর উপর যাবুর কিতাব অবতীর্ণ হয় । আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমাদের মালিক ( তাদের) ভালো করেই জানেন যা আসমানসমূহ ও যমীনের মাঝে ( মজুদ) রয়েছে; আমি একেকজন নবীকে এককেজনের ওপর ( স্বতন্ত্র কিছু) মর্যাদা দান করেছি , ( এমনইভাবেই আমি) দাউদকে যাবুর কেতাব দান ( করে মর্যাদাবান) করেছি ।

সূরা বনী ইসরাইল ১৭:৫৫

অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন-

আমি দাউদের উপর যাবুর (গ্রন্থ) অবতীর্ণ করেছি ।

                                     সূরা নিসা ৪:১৬৩

ম্যাসেজ-মিজানুর রহমান আজহারী Massage Mizanur Rahman Azhari

৩. ইঞ্জিল

কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি হযরত ঈসা (আঃ) এর উপর আল্লাহ্‌ তায়ালা আসমানী গ্রন্থ ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেন । আল্লাহ্‌ এরশাদ করেন-

এ ক্রমধারায় অতঃপর আমি মারইয়াম-পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি ( সে সময় ) আগে থেকে তাওরাতের যা কিছু ( অবশিষ্ট) ছিলো , সে ছিলো তাঁর সত্যতা স্বীকারকারী , আর আমি তাকে ইঞ্জিল দান করেছি ।

                                        সূরা আল মায়েদা ৫:৪৬

এ গ্রন্থগুলো বর্তমানে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যাবে না । যা কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন-

( হে ঈমানদার লোকেরা , এরপরও) তোমরা কি এই আশা পোষণ করো যে, এরা তোমাদের ( সাথে তোমাদের দ্বীনের ) জন্যে ঈমান আনবে ? এদের একাংশ তো ( যুগে যুগে ধরে ) আল্লাহর কেতাব শুনে আসছে , অতপর তাঁরা তাকে বিকৃত করছে, অথচ এরা ভালো করেই তা জানে ।

                                             সূরা বাকারা ২:৭৫

অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন-

সে সব লোকের জন্যে ধ্বংস ( অনিবার্য) যারা হাত দিয়ে কিতাব লেখে নেয়, তারপর ( দুনিয়ার সামনে) বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌ তায়ালার পক্ষ থেকে ( অবতীর্ণ শরীয়তের বিধান )

                                               সূরা বাকারা ২:৭৯

কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের অনেক কথা বর্ণনা হয়েছে । কুরানকে মাপকাঠি হিসিবে ব্যবহার করতে হবে । কুরআনে যা বলা হয়েছে সেটাই চূড়ান্ত সত্য। এটা মেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ । আল্লাআহ বলেন-

(হে মুহাম্মদ) আমি তোমার প্রতি সত্য ( দ্বীন) সহ এ কিতাব নাযিল করেছি, ( আগের ) কেতাবসমূহের যা কিছু ( অবিকৃত অবস্থায়) তাঁর সামনে মজুদ রয়েছে , এ কেতাব তাঁর সত্যতা স্বীকার করে ।

 আসমানী কিতাব

                                        সূরা আল মায়েদা ৫:৪৮

৪. সর্বশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আলকুরআন

কুরআন সকল আসমানী কিতাবের সমর্থক, নিয়ন্ত্রক ও পর্যবেক্ষক । কুরআন জীবন পরিচালনের জন্য যা আদেশ করে তা মানতে হবে যা নিষেধ তা থেকে বিরত থাকতে হবে । আল্লাহ মহাগ্রন্থ আলকুরআন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয় ।

তিনি বরকতময়, যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে ।

সূরা আল ফুরকান ২৫ঃ১

আসমানী কিতাব
আল কুরআন

আল কুরআন একমাত্র গ্রন্থ যা আজও অবিকৃত অবস্থায় আছে এবং সকল আসমানী গ্রন্থের সারনির্যাস । এ গ্রন্থ পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থগুলোর সত্যতা ঘোষণা করে । কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল আসমানী গ্রন্থ রহিত হয়েছে । আল কুরানকে বিশ্বাস করতে হবে এবং অনুসরণ করে মানব জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে ।   

অন্যান্য নবীগনের উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব

আল্লাহ্‌ অন্যত্র বলেন-

তোমরা বলো , আমরা তো আল্লাহ্‌র ওপর ঈমান আনেছি এবং ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের কাছে যা কিছু নাযিল করেছেন তাঁর ওপর, ( আমাদের আগে) ইবরাহীম, ইসমাইল ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের ( পরবর্তী) সন্তানেদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাও ( আমরা মানি, তাছাড়া ) মুসা, ঈসা সহ সব নবীকে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তাঁর ওপরও আমরা ঈমান এনেছি , আমরা এদের কারো মধ্যেই কোনো তারতম্য করি না , আমরা ত হচ্ছি আল্লাহরই অনুগত্য ( বান্দা) ।

                                           সূরা বাকারা , ২:১৩৬

কুরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন-

( হে নবী ) তুমি বলো, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, ঈমান এনেছি আমাদের ওপর যা নাযিল করা হয়েছে তাঁর ওপর, ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের অন্যান্য বংশধরদের প্রতি যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তাঁর ওপরও (আমরা ঈমান এনেছি) আমরা আরো ঈমান এনেছি মূসা, ঈসা এবং অন্য নবিদের তাদের মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তাঁর ওপরও, (আল্লাহর) এ নবীদের কারো মাঝেই আমরা কোনো ধরনের তারতম্য করি না ( মূলত) আমরা সবাই হচ্ছি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী ( মুসলমান) ।

                                                সূরা নিসা, ৩:৮৪

আল কুরআন সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ যা পড়ে আমাদের জীবন গড়তে হবে । আল্লাহ আমাদের সবাইকে আসমানী কিতাব সম্পর্কে জানার ও মানার তাওফিক দান করুন ।

আরো পড়ুন –

>> তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম, ফজিল ও গুরুত্ব

>> সিহাহ সিত্তা হাদীসে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *