ঈমানের অন্যতম রুকুন আল্লাহ্র রাসূলদের বিশ্বাস করা । যুগে যুগে মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা নবী- রাসূল প্রেরণ করেছেন । প্রথম মানব এবং নবী আদম (আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যতো নবী রাসূল দুনিয়াতে আসছেন তাঁদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে ।
এ পোস্টে যা আছে –
- রিসালাত শব্দের অর্থ
- নবী
- রাসূল
- নবী রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হওয়ার কুরআনের আয়াত
- আল কুরআনের নবী রাসূল সমূহ
রিসালত শব্দের অর্থ– রাসূলের পথ , বার্তা, চিঠি, সংবাদ বহন ।
পারিভাষিক অর্থেঃ রিসালত অর্থ- আল্লাহ্র পবিত্র বার্তা মানবজাতির নিকট পোঁছানো । যারা এ দায়িত্ব পালন করেন তাদেরকে রাসূল বলে ।
নবী
আল্লাহ্র নিকট থেকে ওহী প্রাপ্ত প্রত্যেক মানুষই নবী । ওহীর মাধ্যমে শুধু মাত্র আল্লাহ্র বাণী দান করা হয় নতুন কোনো বিধান প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয় না ।
রাসূল
আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ওহী প্রাপ্ত মানুষ যাকে আল্লাহ্ নতুন বিধানবলী দান করে তা প্রচারের নির্দেশ দান করেন তাকে রাসুল বলে ।
নবী রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হওয়ার কুরআনের আয়াত
কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে –
(আল্লাহ্র) রসূল সে বিষয়ের ওপর ঈমান এনেছে যা তাঁর ওপর তাঁর মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা ( সে রাসূলের ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারাও ( সে একই বিষয়ের ওপর) ঈমান এনেছে; এরা সাবাই ঈমান এনেছে আল্লাহ্ওপর , তাঁর ফেরেশতাদের ওপর, তাঁর কেতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলদের ওপর।
সূরা বাকারা(২):আয়াত ২৮৫
অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন-
তোমরা তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, আতেই কিন্তু নেকী নিহিত নেই, তবে আসল কল্যাণ হচ্ছে একজন মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহ্র ওপর , পরকালের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, (আল্লাহ্র)কেতাবের ওপর, (কেতাবের বাহক) নবী রাসূলদের উপর ।……………
সূরা বাকারা (২):আয়াত ১৭৭
আল কুরআনের নবী রাসূল সমূহ
আল কুরআনে ২৫ জন নবী নাম উল্লেখ করা হয়েছে । সূরা আন আম (৬), আয়াত ৮৩ থেকে ৮৬ তে আঠার জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন-
এ ছিলো ( শেরেক সম্পর্কিত ) আমার সেই (অকাট্য ) যুক্তি , যা আমি ইবরাহীমকে তাঁর জাতির ওপর দান করেছিলাম, (এভাবেই) আমি (আমার জ্ঞান দিয়ে ) যাকে ইচ্ছা তাকে সমুন্নত করিঃ অবশ্যই তোমাদের মালিক প্রবল প্রজ্ঞাময়, কুশলী । অতপর আমি তাকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকুব ( আর মতো দুইজন সুপুত্র) এদের সবাইকেই আমি সঠিক পথের দিশা দিয়েছিলাম, (এদের) আগে আমি নূহকেও হেদায়াতের পথ দেখিয়েছি, অতপর তাঁর বংশের মাঝে দাউদ, সোলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা এবং হারুনকেও ( আমি হেদায়েত দান করেছি ) আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরুস্কার দিয়ে থাকি। যাকারিয়া, ইয়াহহিয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও (আমি সঠিক পথ দেখিয়েছিলাম) এরা সবাই ছিলো নেকারদের দলভুক্ত । আমি ( আরো সৎপথ দেখিয়েছিলাম) ইসমাইল, ইয়াসা, ইউনুস এবং লুতকেঃ এদের সাবাইকে আমি ( নবুওত দিয়ে ) সৃষ্টিকুলের ওপর বিশেষ মর্যাদা দান করেছিলাম ।
সূরা আল আনাম, ৬:৮৩-৮৬
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন-
আমি আ’দ জাতির কাছে ( পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই এক ভাই হূদকে , সে তাদের বললো, হে আমার জাতি, তোমারা এক আল্লাহ্ তায়ালাকে দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি ছাড়া তোমাদের দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই, তোমরা কি ( তাকে) ভয় করবে না ?
সূরা আল আরাফ ,৭:৬৫
আল্লাহ্ কুরআনে ইরশাদ করেন –
সামুদ জাতির কাছে আমি ( পাঠিয়েছিলাম) তাদেরই ( এক ) ভাই সালেহকে । সে ( এসে ) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহর তায়ালার বন্দেগী করো , তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই, তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে হাজির হয়েছে, ( আর তোমাদের জন্যে ) এ ( নিদর্শনটি ) হচ্ছে আল্লাহর উষ্ট্রী, একে তোমরা ছেড়ে দাও যেন তা আল্লাহ্ তায়ালার যমীনে (বিচরণ করে ) খেতে পারে , তোমরা তাকে খরাপ মতলবে স্পর্শ করো না, তাহলে ( আল্লাহর পক্ষ থেকে ) কঠোর আযাব এসে তোমাদের পাকড়াও করবে ।
সূরা আলা আরাফ, ৭:৭৩
কুরআনে আল্লাহ্ বলেন-
আর মাদিয়ানবাসীদের কাছে ( আমি পাঠিয়েছিলাম) তাদেররই ভাই শোয়েবকে, সে তাদের বললো , হে আমার জাতি , তোমরা এক আল্লাহ্ তায়ালার বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই , তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ সুস্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে, অতঃপর তোমরা ( সে মোতাবেক ) ঠিক ঠিক মতো পরিমাপ ও ওজন করো , মানুষের ( দেয়ার সময়) কখনো ( কম দিয়ে তাদের ) ক্ষতিগ্রস্থ করো না, আল্লাহ্ তায়ালার এ জমিনে ( শান্তি ও ) সংস্কার স্থাপিত হওয়ার পর তাতে তোমরা ( পুনরায়) বিপর্যয় সৃষ্টি করো না , তোমরা যদি ( আল্লাহ্ তায়ালার ওপর ) ঈমান আনো তাহলে এটাই (হবে) তোমাদের জন্যে কল্যাণকর ।
সূরা আলা আরাফ ৭:৮৫
আল্লাহ্ বলেন-
অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা আদম , নূহ এবং ইবরাহীমের বংশধরদের সৃষ্টিকুলের ওপর ( নেতৃত্ব করার জন্যে ) বাছাই করে নিয়েছেন ।
সূরা নিসা ৩:৩৩
কুরআনে ইরশাদ করেন-
( আরো স্মরণ করো )ইসমাইল , ইদ্রীস ও যুলকিফলের ( কথা) , এরা সবাই ( আমার ) ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ।
সূরা আল আম্বিয়া ২১:৮৫
আল্লাহ্ বলেন-
মুহাম্মদ আল্লাহ্ তায়ালার রসুল; অন্য যেসব লোক তাঁর সাথে আছে তাঁরা ( নীতির প্রশ্নে) কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, ( আবার তাঁরা ) নিজেদের মধ্যে একান্ত সহানুভূতিশীল , তুমি ( যখনই) তাদের দেখবে , ( দেখবে) তাঁরা রুকু ও সাজদাবনত অবস্থায় রয়েছে , আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি কাম্না করছে , তাদের ( বাহ্যিক ) চেহারায়ও ( এ আনুগত্যও ) সাজদার চিহ্ন রয়েছে;
তাদের উদাহরণ যেমন ( বর্ণিত রয়েছে ) তাওরাতে ( তেমনি) তাদের উদাহরণ রয়েছে ইঞ্জিলেও, (আর তা হচ্ছে ) যেমন একটি বীজ যা থেকে বেরিয়ে আসে একটি ( ছোট্ট ) কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মোটা তাজা হয় এবং ( পরে ) স্বীয় কাণ্ডের ওপর তা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যায়, ( চারা গাছটির এ অবস্থা তখন ) চাষীর মনকে খুশীতে উতফুল্ল করে তোলে, ( এভাবে একটি মোমেন সম্প্রদায়য়ের পরিশীলনের ঘটনা দ্বারা ) আল্লাহ্ তায়ালা কাফেরদের মনে ( হিংসাও) জ্বালা সৃষ্টি করেন; ( আবার) এদের মাঝে যারা ( আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রসূলের ওপর ) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে , আল্লাহ্ তায়ালা তাদের জন্যে তাঁর ক্ষমা ও মহাপুরুস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
সূরা আল ফাতহ ৪৮:২৯
কুরআনে ২৫ জন নবী রাসূলের নাম উল্লেখ থাকলেও অনেক নবী রাসূলের কথা কুরআনে বলা হয়নি । তাহলে তাদের ব্যপারে কুরআনে কিছু বলা হয়েছে কিনা তা জানতে হবে ।
কুরআনে যে সব নবী রাসূলদের নাম উল্লেখ নেই তাদের উপরও ঈমান আনতে হবে । আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে বলেন-
(হে মোহাম্মদ) আমি তোমার আগে ( অনেক ) নবী প্রেরণ করেছি, তাদের কারো কারো ঘটনা আমি তোমাকে শুনিয়েছি , ( আবার এমনও আছে) তাদের কথা তোমাদের কাছে আমি আদৌ বর্ণনাই করিনি ।
সূরা মুমিন ৪০:৭৮
অন্যত্র আল্লাহ বলেন-
রাসূলদের মাঝে এমনও অনেকে আছে , যাদের কথা ইতিপূর্বে আমি তোমার কাছে বলেছি, কিন্তু এদের মাঝে বহু রাসূল এমনও আছে যাদের ( নাম ঠিকানা) কিছুই তোমাকে বিলিনি ; মূসার সাথে তো আল্লাহ তায়ালা কথাও বলেছেন ।
সূরা নিসা ৪:১৬৪
কুরআনের আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম অনেক নবী রাসূলের নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি ।
নবী রাসূল সম্পর্কে কুরাআন ও হাদীসে যা বলা হয়েছে তা বিশ্বাস করতে হবে । তাঁদের সম্পর্কে খারাপ কোনো ধারণা করা যাবে না । তাঁদেরকে আল্লাহ্ মনোনীত করেছেন । আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ ঈমানের উপর জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন ।
ঈমান সম্পর্কে আরো জানতে –
>> ঈমানের আরকান