আমাদের জীবন পরিচালনা করার জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন একটি আল কুরআন অন্যটি রাসূলের সুন্নাহ । ফরজ কাজগুলো রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে । ৫ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পর নফল সালাতের মধ্যে তাহাজ্জুদ সালাতের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী ।
এ পোস্টের অনুচ্ছেদ সমূহ –
- তাহাজ্জুদ অর্থ কী ?
- কিয়ামুল্লাইল কী?
- তাহাজ্জুদ সালাতের গুরুত্ব
- তাহাজ্জুদ সালাতের ফযিলত
- তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম
তাহাজ্জুদ অর্থ কী ?
আরবি শব্দ “তাহাজ্জুদ” অর্থ – ঘুম থেকে উঠা। শরিয়তের পরিভাষায় রাতে ঘুম থেকে উঠে যে নফল সালাত আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয় । কেউ যদি রাত ৯ টায় ঘুমায় এবং ১১ টায় উঠে নফল সালাত আদায় করে তবে তা “তাহাজ্জুদ” ও “কিয়ামুল্লাইল” বলে গণ্য হবে ।
কিয়ামুল্লাইল অর্থ কী ?
“কিয়ামুল্লাইল” অর্থ রাত্রিকালীন দাঁড়ানো । এশার সালাতের পর ফজরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত সকল নফল সালাত “কিয়ামুল্লাইল” বলে গণ্য হবে । রাতে ঘুম থেকে জেগে নফল সালাত আদায় করলে তা “কিয়ামুল্লাইল” হবে আবার কেউ ঘুমানোর আগে কিছু নফল সালাত আদায় করলে সেটাও “কিয়ামুল্লাইল” বলে গণ্য হবে ।
আরো পড়ুন >>
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত
ম্যাসেজ – মিজানুর রহমান আজহারী
তাহাজ্জুদ সালাতের গুরুত্ব
কুরআনে অন্য কোনো নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু এ সালাতের কথা বারবার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে । মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য রাতের শেষ প্রহরে সালাত আদায় করা। কুরআনে অনেক জায়গায় রাতের সালাতের কথা বলা হয়েছে । আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের প্রিয়নবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন ।
আল্লাহ্ বলেন –
আর আপনি রাতের এক অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করুন, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব । আশা করা যায় তোমার রাব্ব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে ।
সূরা ইসরা ১৭:৭৯
তাদের বৈশিষ্ট্য হলোঃ তারা ধৈর্যশীল, সত্যপন্থী, বিনত (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী ।
সূরা আল ইমরান ৩:১৭
তারা রাত কাটায় তাদের প্রভুর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাজদা করে এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ।
সূরা ফুরকান ২৫:৬৪
তারা রাতের সামান্য অংশই ব্যয় করতো নিদ্রায়, শেষ রাতে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো ।
সূরা আয যারিয়াত ৫১:১৭-১৮
হে বস্ত্র আচ্ছাদিত ! রাতে দাঁড়াও , কিছু সময় বাদ দিয়ে । অর্ধেক রাত , কিংবা তার চাইতে কম ।
সূরা মুযাম্মিল ৭৩:১-৩
কুরআনে বহু আয়াতে রাতের সালাতের কথা বলা হয়েছে । কিয়ামুল্লাইল বা রাতের গুরুত্ব বুঝাতে একাধিকবার কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত এ সালাত আদায় করতেন। রাতে ক্লান্ত লাগলে তিনি বসে আদায় করতেন । এবার আমরা যদি হাদীস দেখি তাহলে এ সালাতের গুরুত্ব বুঝতে আমাদের আরো সহজ হবে ।
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রা.) বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
হে লোক সকল , তোমরা সালামের প্রসার ঘটাবে , লোকদের খাদ্য দিবে, মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে ( শেষ রাতে) তখন (তাহাজ্জুদের) সালাত (নামায) আদায় করবে । তাহলে তোমরা শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে দাখেল হতে পারবে ।
সুনান তিরমিযী ২৪৮৭ (ই.ফা), সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৩৪,৩২৫১
তাহাজ্জুদ সালাতের ফযিলত
বান্দা রাতের গভীরে একা একা নামায আদায় করে আল্লাহ্ নিকট দোয়া করলে আল্লাহ্ সে দোয়া কবুল করেন। আমাদের বিপদ আপদে আমরা তাহাজ্জুদ আদায় করে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে পারি। এটা দোয়া কবুলের সময়। এ সময় বান্দার সকল চাওয়া আল্লাহ্ পূর্ণ করেন । সাহাবীরা ও তাবেয়ীরা সারা জীবন তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতেন ।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফযিলত আমরা রাসূলের হাদীস থেকে জানতে পারি ।
হাদীস নং-০১
আবু হুরায়রা (রা) বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ফরয সালাতের পর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ফযিলপূর্ণ সালাত রাতের সালাত বা রাতের গভীরে আদায়কৃত সালাত ।
সহীহ মুসলিম ২৬২২ (ই.ফা), ২৬৪৫ ( হাদীস একাডেমী)
হাদীস নং-০২
আবু হুরায়রা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে ? আমি তার ডাকে সাড়া দিব । কে আছে এমন যে, আমার কাছে চাইবে ? আমি তাকে দিব । কে আছে এমন, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে ? আমি তাকে ক্ষমা করব ।
সহীহ বুখারী ১০৭৯ ( ই.ফা), সহীহ মুসলিম ১৬৪২-১৬৪৫ (ই.ফা)
আল্লাহ্ তার বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন সেজদায় এবং রাতের শেষ অংশে ।
হাদীস নং-০৩
আমর ইবনু আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, রাতের শেষভাগেই বান্দা তার রব্বের সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে, সেই ক্ষণে যদি তুমি আল্লাহর যিকরকারীদের একজন হতে সক্ষম হও , তবে তা হবে ।
হাদীস সহীহ
তিরমিযী ৩৫৭৯ (ই.ফা), মিশকাত-১২২৯
হাদীস নং-০৪
উমাম (রা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তোমাদের রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) প্রতিষ্ঠা করা উচিত । কেননা ,এ হল তোমাদের পূর্ববর্তী নেকারদের রীতি। এ হল তোমাদের রব্বের নৈকট্য লাভের উপায়, মন্দ কাজ সমূহের কাফফারা ও পাপসমূহের জন্য প্রতিরোধক।
হাদীস সহীহ
সুনান তিরমিযী, হা -৩৫৪৯ (ই.ফা) , মিশকাত ১২২৭
হাদীস নং-০৫
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লা-হু আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন , যে রাত জেগে নামায আদায় করে; আতঃপর সে স্বীয় স্ত্রীকে ঘুম হতে জাগ্রত করে । আর যদি সে ঘুম হতে উঠতে না চায় তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য) । আল্লাহ্ ঐ মহিলার উপর রহম করুন যে রাতে উঠে নামায আদায় করে এবং স্বীয় স্বামীকে জাগ্রত করে । যদি সে ঘুম হতে উঠতে অস্বীকার করে , তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় ।
সুনান আবু দাউদ ১৩০৮ (ই.ফা) , সুনান আন নাসায়ী ১৬১৩ (ই.ফা), ইবনু মাজাহ ১৩৩৬
হাদীস নং-০৬
জাবের (রাযিয়াল্লা-হু আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি
রাত্রের মধ্যে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলিম ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্থায় যদি সময়টির আনুকুল্য পায় তবে আল্লাহ্ অবশ্যই তাকে তা দান ক্রবেন। আর তা রয়েছে প্রতি রাতে ।
সহীহ মুলিম ১৬৪৩,১৬৪৪ (ই.ফা) , ১৬৫৬ (হাদীস একাডেমী)
তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম
আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোনো ইবাদত করতে হলে তা অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অনুসারে পালন করতে হবে । সুন্নাতের বাইরে ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সবার উচিত সুন্নাত অনুসরণ করা । তাহাজ্জুদ সালতের নিয়ম অন্য নফল সালাতের মতোই । নীচে সালাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হলো-
১. শরীর আবৃত করা
পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত করে রাখা ফরজ, সালাতে বা সালাতের বাহিরে । আবৃত অংশ কোন কারণে অনাবৃত হলে সালাত হবে না। আমাদের সমাজে দেখা যায় কেউ কেউ খাট জামা (টি শার্ট) গাঁয়ে দিয়ে সালাত আদায় করি যার ফলে রুকু, সাজদা করার সময় কোমরের অংশ বের হয়ে যায় । ফরজ আদায় না হলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। কাঁথ ও শরীরের উপরিভাগ আবৃত করা সুন্নাত ।
মহিলাদের জন্য সালাতের মধ্যে শুধু মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি বাদে পুরো শরীর আবৃত করা ফরজ। সালাতের মধ্যে যদি কোন মহিলার কান, চুল, মাথা, গলা, কাথ, পায়ের নলা ইত্যাদি আংশিক বা পূর্ণ অনাবৃত হয়ে যায় তাহলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে ।
২. নিয়ত
-সব কাজের শুরুতে নিয়ত করতে হয়। তাহাজ্জুদ সালাতের শুরুতে নিয়ত মনে মনে করতে হবে । নিয়ত মানে সংকল্প করা মুখে উচ্চারণ করা নয়। মুখে নাওয়াইতুয়ান…………ইত্যাদি বলা সুন্নাতের খেলাফ ।
তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়তে ঘুম আসলে ,রাতে ঘুম না ভাঙলেও তাহাজ্জুদের সাওয়াব পাওয়া যাবে । হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি-
আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যে ব্যাক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে কিন্তু তা চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লিখা হবে, আর আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকা সরূপ হয়ে যাবে ।
সুনান আন নাসায়ী হা ১৭৯০, ইবন মাহাজ( ৫ কিতা ইকামাতিস সালাত, বাব… নামা আন হিজবিহি) ১/৪২৬-৪২৭(ভা ৯৫), সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/১৯৫, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৫৫, আলবানী , সহীহুত তারগীব ১/৩১৮, নং ২১
৩. রুকু ও সাজদা
সালাত ধীর -স্থিরভাবে আদায় করতে হবে । আমাদের সমাজে আরেক কঠিন রোগ রুকু সাজদায় তাড়াহুড়া করা । রুকুকে গিয়ে মাসনূন দোয়া পড়ুন এরপর সোজা হয়ে দোয়া পাঠ করুন। সেজদায় গিয়ে দোয়া পড়ুন , সাজদা থেকে উঠে শান্ত হয়ে বসে রাসূলের শেখানো দোয়াগুলো পড়ুন এরপর আবার সাজদায় যান । দুই সাজদায় মাঝে এবং রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় যাওয়া যাবে না। এবার আমরা হাদীস থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করি –
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাত শুদ্ধ হতে হলে দুসাজদার মাঝে অবশ্যই স্থির হয়ে বসতে হবে ।
আবু দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব…। মান না ইউকীমু সুলবাহু) ১/২২৪-২২৭
মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮, সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/৩২২
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসল্লী পুরোপুরি শান্তভাবে রুকু সাজদা আদায় করে না , তার সালাতের দিকে আল্লাহ্ তাকান না ।
মুসনাদ আহমদ ৪/২২, তাবারানী, আল- মু’জামুল কাবীর ৮/৩৩৮
অন্য হাদীসে সবচেয়ে খারাপ চোর বলা হয়েছে –
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবচেয়ে খারাপ চোর যে সালাত চুরি করে। সাহাবীরা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল, নিজের সালাত কিভাবে চুরি করে? তিনি বলেন, সালাতের রুকু সাজদা পুরোপুরি আদায় করে না ।
মুসনাদ আহমাদ ৩/৫৬, ৫/৩১০ , সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/৩৩১ , সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/২০৯
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে মুসলিমগন , যে ব্যক্তি রুকুতে এবং সাজদায় পুরোপুরি স্থির ও শান্ত না হবে , তার সালাত আদায় হবে না ।
ইবনে মাজাহ( ৫- কিতাব ইকামাতিস সালাত, ১৬ – বাবুর রুকু……) ১/২৮২
তিরমিযী( আবওয়াবুস সালাত, বাব … লা ইউকীমু সুলবাহু ) ২/ ৫১-৫২
৪. সময়
এশার সালাতের পর থকে ফজর ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত আদায় করা যাবে । সুতারাং রাতে একটু ঘুমিয়ে উঠে নফল সালাত আদায় করলে তা “তাহাজ্জুদ” এবং “কিয়ামুল্লাইল” বলে গণ্য হবে । তাহাজ্জুদ সালাতের উত্তম সময় রাতের শেষভাগ।
৫. রাকা’আত
নফল সালাতের ন্যায় ২ রাকা’আত করে আদায় করতে হবে এবং শেষে বিতর আদায় করতে হবে । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ‘বিতর”- সহ মোট ৭ বা ৯ বা ১১ অথবা ১৩ রাকা’আত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন ।
ইসহাক (র.) …… মাসরুক (র.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন,
আমি আয়িশা( রা.) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম । তিনি বললেন, ফজরের দু’ রাকা’আত( সুন্নাত) ব্যতিরেকে ৭ বা ৯ কিংবা ১১ রাকা’আত ।
সহীহ বুখারী হা- ১০৭৩ (ই.ফা)
অন্য একটি হাদীসে ১৩ রাকা’আতের কথা বলা হয়েছে –
উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা (র.) …আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা ১৩ রাকা’আত সালাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফজরের ২ রাকা’আত ( সুন্নাত)ও এর অন্তর্ভুক্ত ।
সহীহ বুখারী হা- ১০৭৪ (ই.ফা)
তাহাজ্জুদ সালাতের নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতের তিলাওয়াত খুব লম্বা করতেন। এক রাকাতে অনেক সময় ৪ /৫ পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন । রুকু সাজদাও অনুরূপ দীর্ঘ করতেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করার কারণে তাঁর মুবারক পা ফুলে যেত।
আবূ নু’আইম (র) ……মুগারী ( রা।) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন ,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি জাগরণ করতেন অথবা রাবী বলেছেন, সালাত আদায় করতেন; এমন কি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দু’ পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাকে বলা হল, এত কষ্ট কেন করছেন ? তিনি বলতেন, তাই বলে আমি কি একজন শুকুরগুযারী বান্দা হব না ।
সহীহ বুখারী হা- ১০৬৩ (ই.ফা)
আমরা আমাদের সাধ্যমত প্রতি রাকাতে কয়েকটি সূরা পড়তে পারি । যদি বড় সূরা মুখস্থ না থাকে তাহলে ছোট ছোট সূরা দিয়ে আমরা তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারি । কুরআনের শেষ ১০ টি সূরা জানা থাকলে ১ম ৫টি সূরা ১ম রাকাতে , ২য় ৫টি সূরা ২য় রাকাতে পড়তে পারি ।
সমাজে প্রচলিত ভুল ধারনা
- এক বার তাহাজ্জুদ শুরু করলে কখনো কোন কারণে বাদ দেওয়া যাবে না ।
- তাহাজ্জুদ পড়লে জিন আসে ।
- তাহাজ্জুদ আন্ধকারে আদায় করতে হয় ।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ৫ ওয়াক্ত সালাতের পাশাপাশি নফল সালাত তাহাজ্জুদ আদায় করার তাওফিক দান করুন ।
Pingback: ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ভাষণ » islamic world
Pingback: সূরা ফাতেহা উচ্চারন বাংলা অর্থ ও প্রশ্ন » islamic world
Pingback: ঈমান কাকে বলে » islamic world
Pingback: মুমিন হওয়ার প্রথম শর্ত আল্লাহর প্রতি ঈমান | islamic world