ঈমানের শাখা

ঈমানের শাখা সমূহ-২য় পর্ব

Loading

প্রতিটি মুসলমানের জন্য ইসলামের যে বিষয়গুলো জানা জরুরী ঈমান তার মধ্যে প্রথম এবং অত্যবশকীয়। ইতিপূর্বে ঈমানের ২১টি শাখা ঈমানের শাখা সমহ-১ম পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ পর্বে অবশিষ্ট ঈমানের শাখা সমূহ আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

২২। যাকাত আদায়

যাকাত আদায় আল্লাহ্‌র বিধান। এ বিধানকে অস্বীকার করা যাবে না। আল কুরআনে যাকাতের কথা বার বার বলা হয়েছে আদায় করার জন্য। যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাদের যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত আদায় করা ঈমানের একটি শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে (আল্লাহ্‌র জন্য) নিবেদিত করে একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিয়ে দিবে, আর এটাই সত্য- কঠিন-সুদৃঢ় দীন।

সূরা আল বাইয়্যেনা ৯৮:৫ 

২৩. সিয়াম পালন করা

রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা প্রতিটি সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরয। এটা আল্লাহ্‌র হুকুম, সিয়াম পালন করা ঈমানের শাখা।

আল্লাহ্ বলেন-

হে ঈমান আনা লোকেরা ! তোমাদের জন্যে লিখে দেয়া হয়েছে সওম (রোযা) , যে ভাবে লিখে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্বেকার লোকদের জন্যে, যাতে করে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়।

সূরা বাকারা ২:১৮৩ 

২৪. ইতিকাফ করা

এটা ফরজে আইন নয় তাই মহল্লা থেকে একজন করলেই সবার আদায় হয়ে যাবে কিন্তু কেউ আদায় না করলে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।

আল্লহ বলেন-

ইবরাহিম আর ইসমাইলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম; তোমরা আমার (কা’বা) ঘরকে পবিত্র করো তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু সাজদাকারীদের জন্যে।

সূরা বাকারা ২:১২৫

২৫হজ্জ করা

কোনো মুসলমানের আর্থিক ও শারীরিক ভাবে সামর্থ্য থাকলে তাঁর জন্য হজ্জ করা ফরয। ফরয হজ্জ জীবনে একবার আদায় করলে তাঁর আদায় হয়ে যাবে, প্রতি বছর আদায় করার প্রয়োজন নেই । হজ্জ ঈমানের অংশ। 

আল্লাহ্‌ বলেন,

যে কোনো ব্যক্তির ( পথ পাড়ি দিয়ে) সেখানে পৌছার সামর্থ্য আছে, সে ঘরে আল্লাহ্‌র জন্যে হজ্জ করা তার কর্তব্য।

সূরা আল ইমরান ৩:৯৭

২৬জিহাদ করা

জিহাদ করা ঈমানের অংশ ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

আর জিহাদ করো আল্লাহ্‌র মধ্যে (উদ্দেশ্যে) জিহাদের হক আদায় করে।

                                                                                                  সূরা হজ্জ ২২:৭৮

২৭. আল্লাহর পথে পাহারা (মুরাবাতাহ)

আল্লাহর পথে পাহারা ঈমানের একটি শাখা ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর । ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর এবং ( শত্রুর বিপক্ষে) সদা প্রস্তুত থাক; আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

সূরা আল ইমরান ৩:২০০           (অনুবাদঃ তাফসীর আহসানুল বায়ান)

আমরা হাদীস থেকে জানতে পারি,

আব্দুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) …. সাহ্ল ইবনু সা’দ সায়ি’দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর উপরে যা কিছু আছে তাঁর চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চাইতে উত্তম।

                                                                                      বুখারী হা.২৬৯৩ (ই.ফা.বা)

২৮শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ় থাকা

শত্রু যত শক্তিশালী হোক না কেন তাকে মোকাবেলা করার সময় মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে যে,শত্রু পরাজিত হবেই।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে ঈমানদার লোকেরা! যখনই তোমরা কোনো সৈন্যদলের সাথে যুদ্ধের সম্মুখীন হবে, তখন অবশ্যি অটল অবিচল থাকবে এবং আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণ করবে, তাহলে অবশ্যি তোমরা সফল হবে।

                                                                                                       সূরা আনফাল ৮:৪৫ 

২৯গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায়ের বিশ্বাস 

গনিমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ দিতে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত ব্যক্তি বা শ্রেণীকে।এটা ঈমানের একটি শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন, জেনে নাও , তোমরা যে গনিমত লাভ করেছো, তার পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহ্‌র রসূলের, রসূলের নিকটাত্মীয়দের, এতিমদের, মিসকিনদের এবং পথিকদের জন্যে নির্ধারণ করা হলো।

                                                                                                            সূরা আনফাল ৮:৪১

৩০দাসত্ব মোচন করা

দাস মুক্ত করা ঈমানের শাখা। দাসদেরকে মুক্ত করে তাদের স্বাধীন জীবনে ফেরত দেওয়া।

আল্লাহ্‌ বলেন-

কিন্তু সে কষ্টসাধ্য গিরিপথে অগ্রসর হতে উদ্যেগ নেয়নি, তুমি কিভাবে জানবে, সেই কষ্টসাধ্য গিরিপথ কী? (তাহলো) গলা ( দাস) মুক্ত করা।

                                                                                          সূরা বালাদ ৯০:১১-১৩

৩১কাফফারা

কাফফারা ঈমানের শাখা। সবকাজেরর কাফফারা হয় না।

পাপ বা অপরাধ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য শরিয়ত-নির্দিষ্ট দণ্ড। ইসলামি পরিভাষায় কতিপয় অপরাধজনক কাজের পর তওবা কবুলের উদ্দেশ্যে আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের নাম কাফফারা। চারটি ক্ষেত্রে এই কাফফারা দিয়ে গুনাহ অর্থাৎ পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।( যার যার ধর্ম- হাবিবুর রহমান )

কাফফারা চারটিঃ

১.হত্যা-সূরা নিসা ৪:৯২

 ২. জিহার ( স্ত্রীকে মায়ের কোনো অঙ্গের সাথে তুলনা করা) সূরা মুজাদালা ৫৮:৩-৪

৩. শপথ –সূরা মায়েদা ৫:৮৯

 ৪. রমযানে দিনের বেলা স্ত্রীকে নিয়ে বিছানায় যাওয়া । দেখুনঃ hhttps://islamqa.info/bn/answers/12329/%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%B8-%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%B2-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%B0%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%A4-%E0%A7%AC%E0%A6%9F-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%9F%E0%A6%B2

৩২চুক্তি লঙ্ঘন না করা

কারো সাথে চুক্তি করলে তা রক্ষা করতে হবে। এটা ঈমানের একটি শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন- হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের অঙ্গীকার পূরণ করো।

                                    সূরা আল মায়েদা ৫:১

৩৩. আল্লাহ্‌র নিয়ামতে কৃতজ্ঞতা

আল্লাহ্‌ নিয়ামত ছাড়া আমরা এক সেকেন্ড পৃথিবীতে বাঁচে থাকতে পারবো না কিন্তু আমরা তার নিয়ামতের সুকর আদায় করি না। আল্লাহ্‌র নিয়ামতে সুকর আদায় করা ঈমানের অংশ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমরা যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ গণনা করো, তাহলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ বড় যালিম, অকৃতজ্ঞ।

                                    সূরা ইব্রাহিম ১৪:৩৫

৩৪. অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা

হাদীস থেকে জানতে পারি-

আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) …… আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তাঁর প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যাক্তি  আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা যেন চুপ থাকে।

                                                          বুখারী হা. ৫৭০৬ (ই.ফা.বা.)

৩৫। আমানত

আমানত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই যার আমানত তাকে জিনিসটা বুঝিয়ে দিতে হবে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমানত তার হকদারকে দিয়ে দিতে।

                                        সূরা আন নিসা ৪:৫৮

৩৬মানুষ হত্যা না করা

মানুষকে হত্যা না করা ঈমানের অংশ।মানুষকে হত্যা করলে তার শাস্তির কথা কুরআনে বলা হয়েছে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা।

                                             সূরা নিসা ৪:২৯

আল্লাহ্‌ আরো বলেন-

                                   

৩৭লজ্জা স্থানের হিফাযত করা

নারী পুরুষ সবাইকে লজ্জা স্থানের হেফাযত করতে হবে। লজ্জা স্থানের হেফাযত করা ঈমানের শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন

যারা নিজেদের যৌন জীবনকে করে হিফাযত।

                                          সূরা মুমিনুন ২৩:৬

৩৮অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ বা দখল না করা-

অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ দখল করা যাবে না এবং ভোগ করা করা যাবে না ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমাদের নিজেদের একে অপরের মাল সম্পদ খেয়োনা বাতিল (অন্যায়- অবৈধ) পক্রিয়ায়।

                                         সূরা বাকারা ২:১৮৮

৩৯হারাম খাদ্য বা পানীয় বর্জন করা

মুসলমানের হারাম খাদ্য বা পানীয় স্পর্শ করা যাবে না । এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে । এটা একটি ঈমানের শাখা ।

আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন-

হারাম করে দেয়া হলো তোমাদের জন্যে মৃত পশু, রক্ত, শুয়োরের মাংস, আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করা পশু।

                                    সূরা মায়েদা ৫:৩

                                  অনুরুপঃ সূরা বাকারা ২:১৭৩  

৪০ পোশাক ও সাজসজ্জা বিষয়ে সতর্কতা  

 পোশাকের ব্যপারে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি-

আবদূর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন , হুযাইফা (রহঃ) পানি পান করার ইচ্ছা করলে এক অগ্নি-পূজারী একটি রূপার বাস্নে তাকে পানি পান করতে দিল। সে সময় তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা পাতলা রেশমী বস্ত্র ও মোটা রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করবে না, সোনা ও রূপার বাসনে পান করবে না, সোনা ও রূপার থালায় খাবেওনা, কেননা পৃথিবীতে এগুলো তাদের( কাফেরদের) জন্য।

                                                                                          মুসলিম হা. ৫২২৬ (ই.ফা.বা)

৪১। শরীয়তের আদর্শ পরিপন্থী খেলাধুলা বর্জন করা

সকল খেলা হালাল বা হারাম নয় । শরীয়ত পরিপন্থী সকল খেলা হারাম হবে ।

আল্লাহ্‌ বলেন,

তারা যখন ব্যবসায় এবং তামাশায় কৌতুক দেখতে পেলো তখন তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থা রেখে তারা ছুটে গেলো সেদিকে। তুমি বলোঃ আল্লাহ্‌র কাছে যা রয়েছে সেটা খেলতামাশা এবং ব্যবসার থেকে কল্যাণকর। আল্লাহই সর্বোত্তম রিযিকদাতা।

সূরা জুমা ৬২:১১

৪২আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করা

আল্লাহ্‌ তায়ালা বার বার কুরআনে বলেছেন মধ্যপন্থি হওয়ার জন্য। ব্যয় বেশী করা যাবে না, আবার যা প্রয়োজন সেটা না করে বসে থাকা যাবে না।

আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন-

তার যখন খরচ করে , তখন অপব্যয় ও করেনা, কার্পণ্যও করেনা। বরং এই দুইয়ের মাঝখানে অবলম্বন করে মধ্যপন্থা।

                                        সূরা ফুরকান ২৫:৬৭

৪৩হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করা

একে অপরের প্রতি হিংসা পরিহার করতে হবে।কারো ভালো কিছু দেখে হিংসা করা যাবে না। হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করাটা ঈমানের শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন,

আর হিংসুটের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।

                                         সূরা ফালাক ১১৩:৫ 

৪৪ কাউকে অপবাদ না দেওয়া বা হেয় না করা

নারী পুরুষ কাউকে অপবাদ দেওয়া যাবে না আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন-

যারা সতী সাধ্বী সরলমনা ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হয়েছে দুনিয়া এবং আখিরাতে, আর তাদের জন্যে রয়েছে বিরাত আযাব।

                                          সূরা নূর ২৪:২৩

৪৫ইখলাস

ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহ্‌র । তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করা যাবে না।সব ইবাদত হবে আল্লাহ্‌কে রাজি ও খুশি করা।

কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন-

হে নবী বলোঃ আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে আমার কাছে ওহি আসে যে, তোমাদের ইলাহ একজন মাত্র ইলাহ। যে কেউ তার প্রভুর সাক্ষাতের প্রত্যাশা করে, সে যেনো আমলে সালেহ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।

                                        সূরা কাহাফ ১৮:১১০  

৪৬সৎকাজে আনন্দ ও অসৎকাজে মর্মাহত

কেউ যদি ভালো কাজ করে মনে আনন্দ পায় এবং তাঁর দ্বারা কোনো গুনাহ হয়ে গেলে কষ্ট পায় তাহলে সে মুমিন এবং তাঁর ঈমান আছে।

রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅয়াসাল্লামবলেন, তোমার ভালো কাজ যদি তোমাকে আনন্দ দেয় আর মন্দ কাজ তোমাকে পীড়া দেয় তাহলে তুমি মুমিন।

মুসনাদে আহমদ হাদীস-২২১৬৬ (সূত্রঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/2775/)

৪৭তওবাঃ গুনাহর চিকিৎসা

বান্দা গুনাহ করবে আর তার জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র নিকট তাওবা করবে এটাই নিয়ম। আল্লাহ্‌ তার বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।

আল্লহ বলেন-

হে মুমিনেরা ! তোমরা সবাই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা অর্জন করো সফলতা।

                                            সূরা নূর ২৪:৩১

৪৮আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানী ও আত্মত্যাগ

আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করতে হলে বান্দাকে আল্লাহ্‌র পথে তার প্রিয় বস্তু কুরবানী করতে হবে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

সুতারাং তুমি সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে।

                                       সূরা কাউসার ১০৮:২

৪৯নেতার আনুগত্য করা

নেতার আনুগত্য করা ঈমানের একটি শাখা ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে লোকেরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহ্‌র আনুগত্য করো, আনুগত্য করো এই রাসূলের, আর তোমাদের (মুস্লিমদের) মধ্যকার  সেইসব লোকদের যারা দায়িত্বশীল ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

                                                                                                    সূরা নিসা ৪:৫৯

৫০আদল- ইনসাফের সাথে বিচার করা

ন্যায় ও ইনসাফের সাথে বিচার কাজ সম্পন্ন করা ঈমানের একটি শাখা।

 আল্লাহ্‌ বলেন-

নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালা করবে, ন্যায় ও ইনসাফের সাথে সুবিচার করবে। আল্লাহ্‌ তোমাদের অতি উত্তম উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

                                                                                               সূরা নিসা ৪:৫৮  

৫১ সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা

একজন মুসলিম সারা জীবন ভালো করে যাবে, তার পাশে খারাপ কাজ হলে সে বাঁধা দিবে এটা মুসলমানের রীতি হতে পারে না। মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহ দিবে, খারাপ কাজে নিষেধ করবে এবং তার সাধ্য অনুসারে বাঁধা দিবে এটা একজন মুসলমানের কাজ যা ঈমানের শাখা।

আল কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন-

তোমাদের মধ্যে অবশ্যি এমন একদল লোক থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) আহ্বান করে কল্যাণের দিকে, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। আর তারাই হবে সফলকাম।

                               সূরা আল ইমরান ৩:১০৪

                                    অনুরূপ ৩:১১০

৫২ জামাতবদ্ধ জীবন যাপন

কুরআনে আল্লাহ্‌  সুবহানাহু তা’আলা ইরশাদ করেন-

তোমরা সবাই মিলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো আল্লাহ্‌র রজ্জুকে (কুরআনকে) এবং বিচ্ছিন্ন- ভাগ ভাগ হয়ে থেকোনা।

সূরা আল ইমরান ৩:১০৩

৫৩সৎকাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা

সৎকাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা ঈমানের শাখা। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে ততটুকু ভালো কাজে সহযোগিতা করবে।

কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন-

আর পুন্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো।

                                     সূরা মায়েদা ৫:২

৫৪লজ্জাশীলতা বজায় রাখা

  বর্তমানে লজ্জা সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে। আমাদের এখন অশ্লীল, বেহায়াপনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজ থেকে ধীরে ধীরে ঈমানের এই শাখাটি হারিয়ে যাচ্ছে।

রাসূলের হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি-

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম জনৈক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আনসারী যখন তার ভাইকে (অধিক) লজ্জা পরিহারের উপদেশ দিচ্ছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন ওকে ছেড়ে দাও । কারণ লজ্জা ঈমানের অংশ।

সহীহ বুখারী হা.২৩ (ই.ফা.বা)

৫৫. পিতা মাতার সাথে সদাচারন

সন্তান দুনিয়ায় আলোর মুখ দেখে বাবা-মার মাধ্যমে, সে কারণেই বাবা মার প্রতি আল্লাহ এতো গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পিতা মাতার সাথে সদাচারন সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও রাসূলের হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি এটা ঈমানের একটি শাখা।

কুরআনে আল্লাহ বলেন-

পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন এবং এতিম ও মিসকিনদের সাথে ইহসান ( উত্তম ও সদয় আচরণ) করবে।

                                                                                        সূরা বাকারা ২:৮৩                               

অন্য আয়াতে আল্লহ বলেন-

পিতা-মাতার প্রতি ইহসান করবে, তাদের একজন কিংবা দুজনই তোমার জীবদ্দশায় বৃদ্ধ বয়সে এসে পৌছালে তাদেরকে উহ পর্যন্ত বলোনা এবং তাদেরকে ধমক দিয়োনা। তাদের সাথে কথা বলবে স্মমানের সাথে।।

                                                                                সূরা বনি ইসরাইল ১৭:২৩

৫৬আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা

ইসলাম পারিস্পারিকের সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখারার জন্য বারবার তাগিদ দিয়ে থাকে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনে আয়াত নাযিল করেন।

আল্লাহ বলেন-

তবে কি তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? এরা হলো সেইসব লোক , যাদের প্রতি আল্লাহ লানত করেন এবং যাদের বধির ও দৃষ্টিহীন করে দেন।

সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২২-২৩

এ সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা পাওয়া যায়।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ  করবে না।

                                                        সহিহ বুখারী ৫৫৫৮ (ইফাবা), মুসলিম ৪৫/৬, হা.২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২, তিরমিযি ১৯০৯, আবূ দাউদ ১৬৯৬, বায়হাকী ১২৯৯৭।

৫৭ সৎ চরিত্র অবলম্বন করা

সৎচরিত্র অবলম্বন করা ঈমানের শাখা । আমাদের সবাইকে সৎ চরিত্রেরে অধিকারী হতে হবে। সৎ চরিত্রেরে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম। সে আমাদের সবার আদর্শ,অনুকরণীয় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।

আল্লাহ বলেন-

অবশ্যি তুমি এক মহান চরিত্রের অধিকারী।

                                                                                                                 সূরা কলম ৬৮:০৪

৫৮.  অধীনস্থদের সাথে সদাচারন করা

ইসলামে অধীনস্থদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। সে যেই হোক –কর্মচারী। এটা একটি ঈমানের শাখা ।

আল্লাহ বলেন-

তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীসের প্রতিও ইহসান করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অহংকারী দাম্ভিকের পছন্দ করেন না ।

                                                                                                                     সূরা নিসা ৪:৩৬

৫৯। ক্রিতদাসের উপর মনিবের অধিকার

ক্রিতদাসের উপর মনিবের অধিকার রয়েছে যা ঈমানের শাখা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যখন দাস পালিয়ে যায়, তখন তার  নামায কবূল হয় না। 

                                                                                   মুসলিম শরিফ হা.১৩৪ (ই.ফা.বা)

৬০. সন্তান ও অধীনস্থদের অধিকার

ইসলামে সন্তানের অধিকার দেওয়ার সাথে অধীনস্থদেরও অধিকার নিশ্চিত করেছে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে ইমাদার লোকেরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে।

সূরা আত তাহরিম ৬৬:৬

৬১. দ্বীনি কারণে পরস্পর সম্পর্ক রক্ষা করা

দ্বীনের কারণে পরস্পর সম্পর্ক নষ্ট না করা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে ঈমান্দার লোকেরা! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে অনুমতি না নিয়ে এবং ঘরবাসীদের সালাম না দিয়ে ঢুকে পড়োনা।

                                                                                        সূরা আন নূর ২৪:২৭  

৬২. সালামের জবাব দেওয়া

এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে সাক্ষাতে সালাম দিলে তার জবাব দিবে। এটাও ঈমানের শাখা।

আল্লাহ্‌ বলেন-

যখন তোমাদের অবিভাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চাইতে উত্তম অভিবাদনে তার জবাব দাও, অথবা অন্তত অনুরূপ জবাব দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ প্রতিটি বিষয়ের হিসাব করবেন।

                                                                                                                     সূরা নিসা ৪:৮৬ 

৬৩. অসুস্থ ভাইয়ের খোজ নেয়া

অসুস্থ ভাইয়ের খবর নেয়া এটা ঈমানের একটি শাখা। আমাদের কেউ অসুস্থ হলে তার খোজ খবর নিতে হবে।

হাফস ইবন উমর (র)……বারা ইবন ‘আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন সাতটি বিষয়ে নিষেধ  করেছেন। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, মোটা ও পাতলা এবং কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং কাসসী ও মিয়সারা কাপড় ব্যবহার করতে। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ আমরা যেন জানাযার অনুসরণ করি, রোগীর সেবা করি এবং বেশী বেশী করে সালাম করি।

সহীহ বুখারী হা.৫২৪৭( ইফাবা), মুসলিম শরীফ হা.৫২১৫ (ইফাবা)  

৬৪. জানাযা বা দাফনে অংশ গ্রহণ করা

মুহাম্মদ (র) ……… আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি ব্লতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলমানের হক পাঁচটিঃ ১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ খবর নেওয়া, ৩। জানাযার অনুগমন করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা ও ৫. হাঁচি দতাকে খুশী করা।

সহীহ বুখারী হা. ১১৬৮ (ইফাবা.)

৬৫. হাঁচি দাতার হাঁচির জবাব দেয়া

 যহায়র ইবনে হারব মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ  ইবন নুমায়র (র) আবু বুরদা (র) থেকে বর্ণিত ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে  শুনেছি যে তোমাদের কেউ যদি হাঁচি দেয় এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে তাহলে তোমরা তাকে দু’আ ( ইয়ারহামুকাল্লাহ) দিবে। আর যদি সে আলহামদুলিল্লাহ্‌ না  বলে তাহলে তোমরাও তাকে দু’আ ( ইয়ারহামুকাল্লাহ) দিবে না ।

মুসলিম শরীফ হা. ৭২১৮ (ইফাবা.)

৬৬. কাফের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখা

কাফের কখনো মুসলমানের বন্ধু হতে পারে না, তাই তাদের থেকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

মুমিনরা মুমিনদের ছাড়া কাফেরদের অলি ( বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) হিসেবে গ্রহণ করবেনা।

                                                                                                          সূরা আল ইমরান ৩:২৮

৬৭. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ

প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে । প্রতিবেশী কষ্ট পায় এমন কাজ করা যাবে না ।

আল্লাহ্‌ বলেন-

পিতা মাতার প্রতি ইহসান করো এবং আত্মীয়-স্বজন , এতিম মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী অনাআত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ব সাথী , ভ্রমণ পথের সাক্ষাত লাভকারী পথিক এবং অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতিও ইহসান করো।

                                                                                                                      সূরা নিসা ৪:৩৬

৬৮. অতিথি আপ্যায়ন বা মেহমানদারী করা

আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র)…… আবু শুরায়হ আদাবী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দু’কান (সে কথা) শুনছিলো ও আমার দু’চোখ ( তাকে) দেখছিলো। তিনি বলছিলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের ব্যাপারে। জিজ্ঞেস করা হলোঃ মেহমানের প্রাপ্য কি, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ একদিন একরাত ভালরূপে মেহমানদারী করা আর তিন দিন হল (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও বেশী হলে তা হল তার প্রতি অনুগ্রহ। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও আখিরাতের দিনের বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে।

বুখারী শরীফ হা.৫৫৯৪ (ইফাবা.)

ঈমান ভঙ্গের কারণ জানতে পড়ুন

ঈমান ভঙ্গের কারণ ১০ টি

৬৯. দোষ গোপন রাখা

ইয়াহইয়া ইবন বুকাইর (র) …… আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং  তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ্‌ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি (পৃথিবীতে) কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ্‌ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।

বুখারী শরীফ হা.২২৮০ (ইফাবা)

৭০ বিপদাপদে ধৈর্য ধারন করা  

বিপদে ধৈর্য ধারণ করা ঈমানের  একটি শাখা । বিপদ দেখে আমরা হতাশ হয়ে নানা রকম পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকি যা ঈমানের ঘাটতির কারণ । ছোট, বড় সব রকম বিপদে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে ধৈর্য ধারণ করার।

আল্লাহ্‌ আল কুরআনে বলেন-

তোমরা সাহায্য চাও সবর ও সালাতের মাধ্যমে। কিন্তু এটা বড়ই কঠিন কাজ। তবে তাদের জন্য নয়, যারা আল্লাহর প্রতি বিনীত-অনুগত।

সূরা বাকারা ২:৪৫ 

৭১। দুনিয়ার মোহমুক্তি(যুহুদ) ও পরিমিত আশা

আল্লাহ্‌ বলেন-

দুনিয়ার জীবনটা তো খেল তামাশা। তোমরা যদি ঈমান আনো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ্‌ তোমাদের পুরস্কার দেবেন। তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের মাল সম্পদ চান না।

সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৬

৭২। আত্ম সম্মানবোধ থাকা

আত্ম সম্মানবোধ থাকা ঈমানের একটি শাখা । সবারই আত্ম সম্মানবোধ থাকা উচিত। সে যে কাজ করুক বা সমাজ যে শ্রেণীর মানুষ হোক।

আল্লাহ্‌ বলেন-

হে মুমিনরা ! তোমরা সবাই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা অর্জন করো সফলতা।

সূরা নুর ২৪:৩১

৭৩ অপ্রজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা

সমাজে বর্তমানে পরিস্থিতি এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে বেশী কথা বলা জ্ঞানী লোকের পরিচয়। কম কথা বলা লোকেরা  সমাজে বোকা ,জ্ঞানহীন বলে পরিচিতি পেয়ে থাকে।

আল্লাহ্‌ বলেন-

যারা অর্থহীন কথাবার্তা থেকে বিরত।

                                                                                                       সূরা মুমিনুন ২৩:০৩

৭৪ বদ্যন্যতা ও দানশীলতারগুন অবলম্বন করা

মানুষ তাঁর সামাজিক ,পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এগুণ অর্জন করা উচিত। এটা একটি ঈমানের শাখা, ভুলে গেলে চলবে না।

আল্লাহ্‌ বলেন-

 যারা ব্যয় (দান) করে সচ্ছল ও অসচ্ছল আবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল কোমল। আর আল্লাহ্‌ তো কল্যাণ কামীদের ভালোবাসেন।

                                                                                                        সূরা আল ইমরান ৩:১৩৪

৭৫ ছোটদের স্নেহ ও বড়দের স্মমান করা

ছোটদের স্নেহ করা এবং বড়দের সম্মান করা ইহা ঈমানের শাখা । ইসলাম ছোটদের স্নেহ করার কথা এবং বড়দের সম্মান করার কথা বার বার বলা হয়েছে।

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন,

নবী করীম সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের হক কি তাহা জানে না, সে আমাদের দলভুক্ত নহে।

                                              আল আদাবুল  মুফরাদ হা.৩৫৫ (ইফাবা) 

অন্য হাদীসে ,

আবূ উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমদের বড়দিগকে সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নহে।

                                                  আল আদাবুল  মুফরাদ হা.৩৫৮ (ইফাবা) 

৭৬। নিজের জন্য যা পছন্দ অপরের জন্য তাই পছন্দ করা

নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয় অপরের জন্য তাই পছন্দ করতে হবে । এটাই ইসলামের বিধান এবং ঈমানের শাখা। নিজের জন্য ভালো,দামী, সুন্দর জিনিস পছন্দ করে অন্যের জন্য  ঠিক উল্টো পছন্দ করা মানে ঈমানের এ শাখাটা তাঁর মাঝে অনুপস্থিত।

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তাঁর ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।

বুখারী ১২ (ই.ফ.বা) , সহীহ মুসলিম ১/১৭ হা.৪৫ , আহমাদ ১২৮০১,১৩৮৭৫, ইবনু মাজাহ ৬৬,

৭৭ পরস্পর সংশোধন

পরস্পরের মাঝে ঝগড়া,বিবাদ হলে সেটা মীমাংস করে দেওয়া ঈমানের শাখা। আমদের সমাজে দেখা যায় ঝগড়া করে একে অপরের সাথে কথা বলা, দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয় এবং সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিরাও তাদেরকে নিয়ে বসে মীমাংস করে না।

আল্লাহ্‌ বলেন-

মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতারাং তোমরা ভাইদের মাঝে মীমাংস করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও।

                                                                                                               সূরা হুজরাত ৪০:১০

আমরা ঈমানের শাখাসমূহ জানতে পারলাম । আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে ঈমানের উপর থেকে জীবনের প্রতিটি কাজ নবী আদর্শ অনুসারে করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ আমাদের সবার ভুল ত্রুটি মাফ করে আখেরাতের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে দেন।

(সমাপ্ত)

1 thought on “ঈমানের শাখা সমূহ-২য় পর্ব”

  1. Pingback: অহংকার মানব জীবন ধ্বংসের অন্যতম কারণ - islamic world

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *