বর্তমান যুগে ঈমানের উপর অবিচল থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে । সকালে একজন মুমিন থাকলেও বিকালে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছে । এক জন মানুষকে মুমিন হতে হলে যে সব বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে তা কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে । এই বিষয়গুলোকে ঈমানের আরকান বা মূলভিত্তি আরকানুল ঈমান বলা হয় ।
এ পোস্টে যা আছে-
- ঈমানের আরকান সম্পর্কিত কুরআনের দলিল
- ঈমানের আরকান সমূহ
- আল্লাহর উপর বিশ্বাস
- ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস
- সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস
- সকল নবী রাসূলের উপর বিশ্বাস
- কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস
- তাকদীরের উপর বিশ্বাস
ঈমানের আরকান সম্পর্কিত কুরআনের দলিল
কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে –
(আল্লাহ্র) রসূল সে বিষয়ের ওপর ঈমান এনেছে যা তাঁর ওপর তাঁর মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা ( সে রাসূলের ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারাও ( সে একই বিষয়ের ওপর) ঈমান এনেছে; এরা সাবাই ঈমান এনেছে আল্লাহ্ওপর , তাঁর ফেরেশতাদের ওপর, তাঁর কেতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলদের ওপর।
সূরা বাকারা(২):আয়াত ২৮৫
অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন-
তোমরা তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে ফেরাও বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, তাতেই কিন্তু নেকী নিহিত নেই, তবে আসল কল্যাণ হচ্ছে একজন মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহ্র ওপর , পরকালের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, (আল্লাহ্র)কেতাবের ওপর, (কেতাবের বাহক) নবী রসুলদের উপর ।……………
সূরা বাকারা (২):আয়াত ১৭৭
এ আয়াতে ঈমানের ৫ টি মৌলিক বিষয়ের কথা আলোচনা করা হয়েছে ।
ঈমানের ৬ষ্ঠ রুকুনের কথা কুরআনে আল্লাহ্ বলেন –
আমি সব কয়টি জিনিসকে অব্যশই একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণমতো সৃষ্টি করেছি
সূরা কামার ৫৪:৪৯
আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-
প্রতিটি গর্ভবতী নারী (তাঁর ভেতরে) যা কিছু বহন করে চলছে এবং ( তাঁর) জরায়ু (সন্তানের) যা কিছু বাড়ায় কমায় , তাঁর সবি আল্লাহ্ তায়ালা জানেন; তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তুরই একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করা আছে ।
সূরা রাদ ১৩:৮
ঈমানের আরকান সমূহ
ঈমানের মূল স্তম্ভ ৬ টি যার উপর ঈমান দাঁড়িয়ে আছে । প্রতি মুসলমানে উচিত ঈমান সম্পর্কে সচেতন হওয়া । ঈমানের আরকান সমূহ ভালোভাবে জানা এবং বুঝা । আমরা মুসলমানরা ঈমান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী নই কিন্তু ইসলামে আমলের চেয়ে ঈমানের গুরুত্ব অনেক বেশী । আমল না করেও কেউ জান্নাতে যেতে পারে কিন্তু বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে ।
ঈমানের আরকান ৬ টি যথা-
১. আল্লাহর উপর বিশ্বাস
ঈমানের আরকান সমূহের প্রথম রুকন আল্লার উপর বিশ্বাস । আল্লাহর উপর এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ্ একমাত্র সৃষ্টি কর্তা, পালন কর্তা , রিযিকদাতা , সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ্ । ইবাদতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ এবং তিনি এক ও একক । আল্লাহ্ শুধু সংখ্যায় এক নয় তিনি একক ।
২. ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস
ঈমানের আরকানের অন্যতম রুকুন ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস । ফেরেশতারা আল্লাহ্র রাজ্যের সেবক । তাঁরা আল্লাহ্র ইবাদত, প্রশংসা করা এবং আল্লাহ্ যা বলেন তা করা ছাড়া অন্য কিছু করার ক্ষমতা তাঁদের নাই । তাঁরা নুরের তৈরী। তাঁদের হিসাব আল্লাহই ভালো জানেন । তাঁরা নারী পরুষ গুনে গুণান্বিত নন ।
৩. সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস
সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস ঈমানের আরকানের অন্যতম রুকন । মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনয়নের লক্ষ্যে আল্লাহ্ আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন । যার সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ্ জানে । কুরআনে তিনটি আসমানী কিতাবের নাম পাওয়া যায় ।আল্লাহ্ তায়ালা তাওরাত , যাবুর, ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেন স্ব স্ব গোত্রের উপর কিন্তু সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন অবতীর্ণ হয় সমগ্র মানব জাতির উপর । পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব রহিত হয়েছে আল কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর ।কুরআন সকল আসমানী কিতাবের সার নির্যাস । তাই আমাদের কুরআনের সকল আদেশ, নিষেধ ও উপদেশ জানতে এবং মানতে হবে ।
৪. সকল নবী রাসূলের উপর বিশ্বাস
সকল নবী রাসূলের উপর বিশ্বাস ঈমানের আরকানের একটি রুকন। আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে সত্য জানানোর জন্য প্রত্যেক গোত্রে নবী প্রেরণ করেছেন । সব নবী মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন । নবী – রাসূল ছিল আল্লাহর মনোনীত বান্দা । কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম পাওয়া যায় ।এদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ্ ভালো জানে । মর্যাদার দিক থেকে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ।আল্লাহর প্রেরিত সব নবী রাসূলকে বিশ্বাস করতে হবে কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওইয়াসাল্লামের আদর্শকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে ।
৫ . কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস
এ বিশ্বাস সবার থাকতে হবে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হবে । আল্লাহর সামনে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে । আমলগুলো ওজন করা হবে । যার নেক আমল বেশী হবে সে জান্নাতে যাবে এবং যার পাপ বেশী হবে সে জাহান্নামে যাবে ।
৬ . তাকদীরের উপর বিশ্বাস
তাগদীরের উপর বিশ্বাস ঈমানের আরকান সমূহের অন্যতম রুকন । তাগদীর আল্লাহ্ তায়ালার বিশ্বজনীন নিয়মনীতি । আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের জন্য করেন সব কিছু মঙ্গলের জন্য । কখনো মনে করা যাবে না – আমি যদি এটা না করতাম তাহলে এরকম হতো না । এরকম চিন্তা করা যাবে না ।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ ঈমানের উপর অটুট রাখুক । আমরা ঈমানে আরকান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি । আল্লাহ্ আমদের সবাইকে তাওফিক দান করুন ।
আরো পড়ুন >> ঈমান কাকে বলে ?
ম্যাসেজ-মিজানুর রহমান আজহারী Massage Mizanur Rahman Azhari
শেয়ার করতে
Pingback: মুমিন হওয়ার প্রথম শর্ত আল্লাহর প্রতি ঈমান | islamic world
Pingback: ঈমানের চতুর্থ আরকানঃ নবী রাসূলগনের প্রতি ঈমান - islamic world
Pingback: ঈমানের তৃতীয় আরকানঃ সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস - islamic world