ইসলামে নারীর অধিকার যা দিয়েছে কোন দেশ ,জাতি, ধর্ম , বর্ণ , আধুনিক বিশ্ব আজ পর্যন্ত তা দিতে পারেনি।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্কে একটি সুতা কারখানার সাহসী নারী শ্রমিক মজুরিবৈষম্য , কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা এবং বৈরি পরিবেশমুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে রাস্তায় নেমেছিলেন প্রতিবাদ করতে ।যার কারণে তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন ও নিপীড়ন ।
জার্মানির নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন ১৯০৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন করেন এবং ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এ দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ৮ মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন ।
১৯৭৫ সালে থেকে জাতিসংঘ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।১৯৭৭ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে ।বাংলাদেশ এ দিবসটি ১৯৭১ সাল থেকে পালন করে আসছে ।
২০২১ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- “করোনা কালে নারী নেতৃত্ব , গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব”
নারীর অধিকার আদায়ের জন্য সারাবিশ্বে প্রতি বছর বিভিন্ন সভা,সমাবেশ, সেমিনার, র্যালি অনুষ্ঠিত হলেও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। নারী আন্দলনের ১৬৪ বছর পরেও নারীরা আজও অসহায় ।
এ পোস্টে ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে যা জানতে পারবেন-
ইসলামে নারীর অধিকার
ইসলাম আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে নারীদের যে সম্মান,অধিকার দিয়েছে তা বিশ্বের কোন জাতি, ধর্ম, দেশ দিতে পারেনি পারবেও না । নারী এবং পুরুষ সম্পূর্ণ আলাদা – তাদের কাজে কর্মে, দৈহিক গঠনে, দায়িত্বে ।
আল কুরআনে “ইমরাআহ” যার অর্থ “নারী” শব্দটি ২৬ বার এবং “নিসা” যার অর্থ “মহিলা” শব্দটি ৫৭ বার উল্লেখ্য করা হয়েছে ।
আল কুরআনে “নিসা” নামে একটি সম্পূর্ণ সূরা নাযিল হয়েছে নারীদের অধিকার দায়িত্ব, কর্তব্য সম্পর্কে ।এছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে নারীদের অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে ।
আরো পড়ুন >> ম্যাসেজ – মিজানুর রহমান আজহারী
ইসলামে নারীর আধিকার সম্পর্কে এতোবেশি গুরুত্ব দিয়েছেন -আমরা যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো এমন কোনো বিষয় নেই যা ইসলামে নেই ।নীচে গুরুত্ব কয়েকটি আলোচনা করা হলো-
১. নারীর শিক্ষার অধিকার
ইসলাম নারীদেরকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেন-
“তোমরা তাদের(নারীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।“
( সূরা নিসা আয়াত ১৯ )
নারী পুরুষ সবাইকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে । তাই রাসূল সাঃ বলেন-
“ইলেম শিক্ষা করা (জ্ঞান অর্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর প্রতি ফরজ “
(ইবনে মাজাহ)
২. মা হিসেবে নারীর অধিকার
একজন নারী যখন মা হয় তখন তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । ইসলাম মায়ের মর্যাদা কতটুকু দিয়েছে তা আমরা এ হাদীস থেকে জানতে পারি।
“আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন – ইয়া রাসূলুল্লাহ! সদাচার প্রাপ্তির অগ্রগণ্য ব্যক্তি কে ? তিনি বলেন –তোমার মা । তিনি বলনে ,তারপর কে? তিনি বলেন –তোমার মা। তিনি বলনে ,তারপর কে? তিনি বলেন –তোমার মা।তিনি বলনে ,তারপর কে? তিনি বলেন –তোমার পিতা ।“
(আদাবুল মুফরাদ-হাদীস নং-৫ )
(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তাহাবী)।
আল কুরআনে পিতা -মাতার সদ্ব্যবহার কথা বলা হয়েছে –
“তোমার মালিক আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো এবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমরা জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের(সাথে) বিরক্তি সুচক কিছু বলো না এবং কখনো তাদের ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো ।“
(আল কুরআন ১৭:২৩)
৩. মেয়ে হিসেবে নারীর অধিকার
জাহিলিয়াতের যুগে কন্য সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো । সে সময় ইসলাম সুখবর দিল যাদের কন্যা সন্তান আছে তাদের-
ইবনে মাজাহ উকবা ইবন আমের থকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল(সাঃ) বলতে শুনেছি, তিনি বলেন –
“যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং সে তাদের লালন পালনে ধৈর্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়, তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে।“
(ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৩৬৬৮)
৪. স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার
ইসলামে স্ত্রীর ভরন পূষনের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব তার স্বামীর কিন্তু তাই বলে তার সাথে খারাপ আচরণ করা,তাঁকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাঁর সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থকে বর্ণিত , রাসূল (সাঃ) বলেন,
“ মুমিনদের মধ্যে পুরোপুরি ঈমানদার হলো তোমাদের মধ্যে যারা আখলাকের দিক দিয়ে উত্তম । আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তোমাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।“
সহি মুসলিম ৫৭/১০
ইসলাম নারীর সম্পদের অধিকার দিয়েছে। দিয়েছে বিয়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতা । অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নারীরা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে এ জন্য দিয়েছে উত্তরাধিকার অধিকার। ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি আনতে পারে এবং পরকালের জীবনে সূখ শান্তি বয়ে আনতে পারে । আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন সুন্নাহ অনুসারে জীবন যাপন করার তৌফীক দান করুন। (আমিন ) ।